বেশ, আমি একটা গল্প বলতে চাচ্ছিলাম
আমার নতুন বইটি লেখার সময় যেটি আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল
এবং এই গল্পের ঘটনাটি ঘটেছিল
৩০০০ বছর আগে,
যখন ইসরাইল রাজ্যের শৈশবকাল চলছিল।
এবং ঘটনাটি ঘটেছিল শেফেলাহ নামক এক জায়গায়
যা আজকের ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত।
এবং যে কারনে ঘটনাটি আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল তা হল
আমি ভেবেছিলাম আমি এটা বুঝতে পেরেছি, এবং তখন আবার ঘটনাটিতে ফিরে গিয়েছিলাম
এবং তখন উপলদ্ধি করলাম যে আমি এটাকে একেবারেই বুঝতে পারিনি।
প্রাচীন প্যালেস্টাইনের পূর্ব সীমান্তের বরাবর
একটি পর্বতশ্রেণী ছিল।
যা আজকের দিনে ইসরাইল রাষ্ট্রের পূর্ব সীমান্ত।
এবং এই পর্বতশ্রেণীর মধ্যেই প্রাচীন নগর সমুহ অবস্থিত,
ওই এলাকার নগর সমুহ, যেমন, জেরুসালেম, বেথলহেম, হেব্রন।
এবং তারপরে আছে একটি উপকূলীয় সমভূমি
- ভূমধ্যসাগরের তিরে, যেখানে আজকের দিনের তেলআবিব শহর।
এবং এই উপকূলীয় সমভূমি এবং এই পর্বতশ্রেণীর সংযোগ কারী
এলাকাটির নাম ছিল শেফেলাহ,
যা ছিল পূর্ব-পশ্চিম বরাবর সারিবদ্ধ কতগুলো উপত্যকা ও ঢালের শ্রেনী,
এবং আপনি শেফেলাহ বরাবর যেতে পারেন, শেফেলাহর ভিতর দিয়ে
যেতে পারেন এই উপকূলীয় সমভূমি থেকে ওই পর্বতশ্রেণীতে।
এবং ইসরাইলে গিয়ে থাকলে জানবেন যে শেফেলাহ
হচ্ছে ইসরাইলের সবচেয়ে নয়নাভিরাম অংশ।
চমৎকার একটি এলাকা, আছে ওক গাছের জঙ্গল
এবং গমের ক্ষেত আর আঙ্গুরের বাগান।
কিন্তু ওই এলাকার ইতিহাসে অধিকতর জরুরী
এটি যে ভুমিকা পালন করেছে, এর একটি সত্যিকারের কৌশলগত ভুমিকা
ছিল, যার মাধ্যমে আক্রমণকারী সৈন্যদলেরা
ওই উপকুলের সমভূমি থেকে পথ করে নিয়ে
পর্বতশ্রেণীতে উঠে গিয়ে সেখানে বসবাসকারীদেরকে ভীত করে তুলত।
এবং ৩০০০ বছর আগে ঠিক এটাই হয়েছিল।
প্যালেস্টাইনিরা, যারা কিনা সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল
ইসরাইল রাজ্যের,
তাঁরা এই উপকূলীয় সমভূমিতে বাস করতো।
তাদের আদি নিবাস ছিল ক্রিট দ্বীপে। তাঁরা ছিল সমুদ্র-বিহারী জাতি।
এবং তাঁরা হয়ত যাত্রা শুরু করাছিল
শেফেলাহ এর কোনও একটি উপত্যাকার ভিতর দিয়ে
ওই পর্বতশ্রেণীর পানে,
কারন তাঁরা চেয়েছিল সেই উঁচু জমিটা দখল করতে
যেটি বেথলহেমের লাগোয়া এবং এর মাধ্যমে ইসরাইল রাজ্যকে দুভাগ করতে।
এবং রাজা সোল এর নেতৃত্বাধীন ইসরাইল রাজ্য
স্পষ্টতই এটি বুঝতে পেরেছিল,
এবং সোল তাঁর বাহিনীকে পাহাড় থেকে নামিয়ে আনলো
এবং এলাহ উপত্যাকায় তাঁরা প্যালেস্টাইনিদের মুখোমুখি হল,
যেটি ছিল শেফেলাহ এলাকার অন্যতম নয়নাভিরাম উপত্যাকা।
এবং ইসরাইলিরা উত্তরের ঢাল বরাবর অবস্থান নিল,
এবং প্যালেস্টাইনিরা অবস্থান নিল দক্ষিনের ঢাল বরাবর,
এবং এভাবেই দুই দল বসে বসে সপ্তাহ পার করে দিল
এবং একে অপরকে দেখতে থাকলো, এমনই অচলাবস্থা।
কেউ কাউকে আক্রমন করছে না, কারন আক্রমন করতে হলে
আপনাকে পাহাড় থেকে উপত্যাকায় নেমে আসতে হবে
এবং তারপরে অন্য পাশে উঠতে হবে, আর তখনই আপনি পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পরবেন।
তাই শেষমেশ এই অচলাবস্থা কাটাতে,
প্যালেস্টাইনিরা তাঁদের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধাকে নামালো
সেই উপত্যকার মেঝেতে, আর সে হুঙ্কার দিল
এবং ইসরাইলিদেরকে বলল,
"তোমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধাকে নীচে পাঠাও,
আর আমরা দুজনই এর সুরাহা করবো।"
প্রাচীন কালের যুদ্ধকান্ডের একটা প্রচলিত প্রথা ছিল এই দ্বন্দ্বযুদ্ধ।
এটি ছিল বিবাদ নিষ্পত্তি করার একটি উপায়
যেখানে বড় যুদ্ধের রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হত।
এবং যে প্যালেস্টাইনিকে পাঠানো হয়েছিল,
তাঁদের দানবাকৃতি বীর পালোয়ান।
সে ছিল ছয় ফিট নয় ইঞ্চি।
সে ছিল ঝলমলে ব্রোঞ্জের তৈরি বর্মে আপাদ মস্তক আবৃত,
এবং তাঁর ছিল একটি তলোয়ার আর ছিল একটি বর্শা
আর ছিল তাঁর বল্লম। একেবারে সাংঘাতিক ভয়ঙ্কর।
আর সে এতই ভয়ালদর্শন ছিল যে ইসরাইলিদের কেউ তাঁর সাথে লড়ার সাহস করে নি।
এ যেন মৃত্যুর আহ্বান, তাই না? তাঁরা কোনভাবেই তাঁকে পরাস্ত করার কল্পনাও করতে পারেনি।
এবং পরিশেষে একমাত্র একজনই সামনে এগিয়ে এল -
এক নবীন রাখাল বালক,
আর সে সোল এর সামনে গিয়ে বলল, "আমি তাঁর সাথে লড়ব।"
এবং সোল বলেছিল, "তুমি ওর সাথে পারবে না। এটি পাগলামি।
তুমি বাচ্চা ছেলে। আর সে একজন বীর পালোয়ান।"
কিন্তু রাখাল ছেলেটি নাছোড়বান্দা। সে বলল, "না, না, না,
আপনি বুঝতে পারছেন না, আমি আমার পশুপালকে রক্ষা করে চলেছি
বছরের পর বছর সিংহ আর নেকড়ের হাত থেকে। আমি মনে করি আমি পারবো।"
আর সোল ছিল অনোন্যপায়। তাঁর হাতে আর কেউ ছিলনা যে এগিয়ে আসবে।
তাই তিনি বললেন, "বেশ তবে তাই হোক।"
এবং তখন ছেলেটির দিকে ফিরে বললেন,
"কিন্তু তোমাকে তো এই বর্ম পড়তে হবে। তুমি এভাবে যেতে পারো না।"
তাই তিনি রাখাল ছেলেটিকে তাঁর বর্মটি দেবার চেষ্টা করলেন,
এবং রাখাল ছেলেটি বলল, "না।"
সে বলল, "আমি এসব পড়তে পারবো না।"
বাইবেলের ভাষায়, "আমি এটি পড়তে পারি না কারন আমি এর জন্য পরিণত নই,"
অর্থাৎ, "আমি আগে কখনও বর্ম পড়িনি। এটা পাগলামি করা হবে।"
তাই এর বদলে সে নীচে নেমে আসলো
এবং পাঁচটি পাথরের টুকরা তুলে নিল
এবং তাঁর রাখালের ঝুলিতে রাখলো
এবং সেই দানবের মুখোমুখি হবার জন্য পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হেঁটে নেমে গেল।
এবং দানবটা সেই মানবমূর্তিকে এগিয়ে আসতে দেখলো,
এবং হুংকার দিয়ে বলল, "কাছে আয় যেন আমি তোর মাংস
খাওয়াতে পারি ঊর্ধ্বাকাশের পাখিদেরকে আর প্রান্তরের পশুদেরকে।"
এভাবেই সে ছেলেটিকে বিদ্রূপ করছিল যে
আসছিল তাঁর সাথে লড়তে।
আর রাখালছেলেটি ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসতে থাকলো,
এবং দানবটি দেখল ছেলেটির হাতে একটা লাঠির মত জিনিস।
শুধু ওটাই তাঁর সাথে ছিল।
কোনও অস্ত্র নয়, কেবলমাত্র এই রাখালের লাঠি।
এবং সে বলল -- রীতিমত অপমানিত বোধ করে --
"আমি কি একটি কুকুর যে তুমি লাঠি নিয়ে আমার কাছে আসবে?"
এবং রখালছেলেটি তাঁর পাথরগুলির একটি নিল,
পকেট থেকে বের করে তাঁর সেই বিশেষ গুলতিতে আটকিয়ে নিল
এবং সেটি ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে ছুঁড়ে দিল
এবং সেটি দানবের দুই চোখের ঠিক মাঝ বরাবর গিয়ে লাগলো --
ঠিক এখানে, তাঁর দেহের সবচেয়ে নাজুক স্থানটিতে --
এবং সে হয় মারা গেল কিংবা অজ্ঞান হয়ে ভূপাতিত হল
এবং রাখাল ছেলেটি দৌড়ে উঠে গিয়ে তাঁর তলোয়ারটি নিল
এবং দানবের মাথাটি কেটে নিল।
এবং সে দৃশ্য দেখে প্যালেস্টাইনিরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে গেল।
আর নিশ্চিতভাবেই, সেই দানবের নাম ছিল গলিয়াথ
এবং রাখাল বালকের নাম ছিল ডেভিড,
আর যে কারনে সেই গল্পটি আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল,
আমার বইটি লেখার পুরো সময় জুড়ে,
তা হল, এই গল্পের যা কিছুই আমি জানতাম বলে মনে করতাম
তা সবই ভুল বলে প্রতীয়মান হল।
তো, এই গল্পে, ডেভিডকেই আন্ডারডগ হিসাবে ধরে নেয়া হয়েছে, তাই না?
বস্তুতপক্ষে, ডেভিড আর গলিয়াথ - এই পরিভাষাটি
একটি উপমা হিসাবে ভাষায় প্রবেশ করেছে যার অর্থ
অসম্ভাব্য বিজয় -
ভীষণ শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্বলের বিজয়।
এখানে আমরা কেন ডেভিডকে আন্ডারডগ বলি?
বেশ, তাঁকে আন্ডারডগ বলা যায় কারন সে ছিল নেহায়েত একটি বালক,
একটি ছোট্ট বালক, আর গলিয়াথ ছিল বিশাল, পরাক্রমশালী দানব।
এছাড়াও তাঁকে আমরা আন্ডারডগ বলি
কারন গলিয়াথ একজন ঝানু যোদ্ধা,
আর ডেভিড একটি মামুলী রাখালছেলে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় যে কারনে তাঁকে আন্ডারডগ বলি
তা হল কী কী অস্ত্র-শস্ত্র তাঁর কাছে ছিল -- যেখানে গলিয়াথ সুসজ্জিত ছিল
যাবতীয় আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র,
এই ঝলমলে দেহ বর্ম
এবং একটি তলোয়ার আর একটি বর্শা ও বল্লম
আর ডেভিডের সম্বল ছিল শুধু এই গুলতি।
বেশ, এই বাক্যটা দিয়ে শুরু করা যাক -
"ডেভিডের সম্বল ছিল শুধু এই গুলতি,"
কারন এখানেই আমরা প্রথম ভুলটি করি।
প্রাচীনকালের যুদ্ধকান্ডে তিন ধরনের যোদ্ধা ছিল,
অশ্বারোহী, যাঁরা ঘোড়া কিংবা রথে চড়ে যুদ্ধ করতেন,
ছিল ভারী-পদাতিক, পায়ে হাঁটা সৈন্যদল,
ঢাল-তলোয়ার সজ্জিত সসস্ত্র পদাতিক -
আর কিছু বর্ম ও সাথে থাকতো।
এবং ছিল গোলন্দাজ বাহিনী, আর তাঁরা ছিল তীরন্দাজ,
কিন্তু, মুলতঃ, গুলতিবাজ বিশেষ।
আর এই গুলতিবাজদের অস্ত্র ছিল একটি চামড়ার থলে
আর তাতে আটকানো দুটি লম্বা দড়ি।
আর তাঁরা রাখতো একটা গুলি, হয় পাথর কিংবা সীসার বল,
ওই থলির ভিতরে, আর তাঁরা এভাবে এটাকে চক্রাকারে ঘোরাতো
আর দড়িদুটির একটি ছেড়ে দিত,
আর এভাবেই গুলিটিকে ছুঁড়ে দেয়া হত
লক্ষ্য বস্তুর দিকে।
ডেভিডের কাছেও এটাই ছিল, আর এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ
যে এই গুলতি যেই সেই গুলতি নয়।
এটা যা ভাবা হয় সেটা নয়, ঠিক তো? বাচ্চাদের খেলনা নয়।
বাস্তবে এটি অবিশ্বাস্য রকম বিধ্বংসী একটি অস্ত্র।
ডেভিড যখন এটাকে এভাবে ঘোরাচ্ছিল,
সম্ভবতঃ এটাকে সে পাক খাওয়াচ্ছিল -
সেকেন্ডে ছয় বা সাত বার করে,
আর তার মানে, ছোঁড়ার পরে পাথরটি
অত্যন্ত দ্রুত ছুটে যাচ্ছিল,
সম্ভবতঃ সেকেন্ডে ৩৫ মিটার বেগে।
এটি একটি বেসবলের চেয়েও যথেষ্ট দ্রুতগতির,
এমনকি শ্রেষ্ঠতম নিক্ষেপকের ছোঁড়া বলের চেয়েও যথেষ্ট দ্রুত।
তদুপরি, এলাহ উপত্যাকার পাথরগুলি
সাধারন শিলা ছিল না। ওগুলো ছিল বেরিয়াম সালফেট,
এগুলি সাধারন পাথরের চেয়ে দ্বিগুন ঘনত্বের।
নিক্ষেপণ তত্ত্বের হিসাবে,
ডেভিডের ছোঁড়া পাথরটির আঘাত করার ক্ষমতা
মোটামুটিভাবে ততটাই ছিল
যতটা একটি .৪৫ ক্যালিবারের বন্দুকের থাকে।
এটি সাংঘাতিক রকমের একটি বিধ্বংসী অস্ত্র।
অভ্রান্ততা, ঐতিহাসিক নজীর থেকে জানা যায়
যে গুলতিবাজেরা -- অভিজ্ঞ গুলতিবাজেরা আঘাত করতে পারতো
এবং ২০০ গজ দূর থেকেও শিকারকে পঙ্গু এমনকি হত্যা করতে পারতো।
মধ্যযুগের সূচিকর্ম থেকে জানা যায় যে এইসব গুলতিবাজেরা
উড়ন্ত পাখিকেও আঘাত করতে সক্ষম ছিল।
তাঁরা ছিল সাংঘাতিক নিখুঁত লক্ষ্যভেদী।
ডেভিড যখন অবস্থান নিল - আর গলিয়াথ থেকে ২০০ গজও দূরে ছিল না।
সে গলিয়াথের বেশ কাছেই ছিল --
যখন সে অবস্থান নিয়ে গলিয়াথের দিকে জিনিসটা ছুঁড়েছিল,
তাঁর সকল আশা আকাঙ্ক্ষা সেখানেই পুঞ্জিভূত ছিল
যেন সে গলিয়াথকে তাঁর সবচেয়ে নাজুক স্থানটিতে আঘাত করতে পারে
- ঠিক তাঁর দু'চোখের মাঝখানে।
প্রাচীন যুদ্ধকাণ্ডের ইতিহাস ঘাঁটলে
আপনি বার বার দেখতে পাবেন
যে গুলতিবাজেরাই পদাতিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিত,
তা সে লড়াইটা যে ধরনেরই হোক না কেন।
তো, গলিয়াথ কি ছিল? সে ছিল একজন ভারী পদাতিক,
এবং ইসরাইলিদেরকে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আমন্ত্রন জানানোর সময় সে আশা করেছিল
যে তাঁকে আরেকজন ভারী পদাতিকের সাথে লড়তে হবে।
যখন সে বলে, "কাছে আয়, যেন আমি
আকাশের পাখি আর ময়দানের পশুদেরকে তোর মাংস খাওয়াতে পারি,"
সেখানে মূল কথাটি ছিল "কাছে আয়।"
আমার কাছে আয়, কারন আমরা লড়তে যাচ্ছি,
হাতাহাতি, ঠিক এরকম।
সোল ও তেমনটিই ভেবেছিলেন।
ডেভিড বলেছিল, "আমি গলিয়াথের সাথে লড়ব,"
আর সোল তাকে তাঁর বর্মটি দিতে চেয়েছিল,
কারন সোল ভেবেছিল, "ওহ, যখন বললে 'গলিয়াথের সাথে লড়ব,'
তখন তুমি 'তাঁর সাথে হাতাহাতি লড়াই করবে,'
পদাতিকের সাথে পদাতিক।"
কিন্তু ডেভিডের মনে এরকম কোন ইচ্ছাই ছিল না।
সে এভাবে তাঁর সাথে লড়বে না। কেনই বা লড়বে?
সে রাখাল-বালক। এই পুরো সময়টা সে কাটিয়েছে
এই গুলতির সাহায্যে সিংহ আর নেকড়ের হাত থেকে তাঁর পশুপালকে রক্ষা করে।
এখানেই তাঁর শক্তি নিহিত।
তাই, সে সেই রাখাল, সু-অভিজ্ঞ -
একটি সাংঘাতিক অস্ত্র চালনায়,
মুখোমুখি হয়েছে এক কুঠারধারী দানবের বিরুদ্ধে
যার বর্মের ওজন শত পাউন্ড
আর তাঁর অবিশ্বাস্য রকমের ভারী অস্ত্রসস্ত্র
যেগুলো কিনা স্বল্প-দুরত্বের লড়াইয়ের উপযোগী।
গলিয়াথের অবস্থা ছিল শিকারীর সামনে স্থির বসে থাকা হাঁসের মত, একেবারেই সুযোগ বিহীন।
তাহলে ডেভিডকে কেন আমরা আন্ডারডগ বলে বেড়াই?
আর কেন তাঁর এই বিজয়কে আমরা অসম্ভব বলে অভিহিত করি?
এখানে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ব্যাপার রয়েছে।
এমন নয় যে আমরা ভুল বুঝেছি, শুধু ডেভিড
আর তাঁর ও অস্ত্রপাতিকে,
আমরা গলিয়াথকেও গভীরভাবে ভুল বুঝেছি।
গলিয়াথকে যেমনটি মনে হয়, সে আসলে তেমন নয়।
বাইবেলের এই কাহিনীতে সব ধরনের ইঙ্গিত দেয়া আছে,
সে সময়কার ঘটনাগুলো বেশ গোলমেলে
আর তাঁর ওই বীর পালোয়ান ইমেজের সাথে ঠিক খাপ খায় না।
প্রথমতঃ, বাইবেল বলছে যে গলিয়াথ
একজন পরিচারকের সহায়তায় উপত্যাকায় নেমে এসেছিল।
এটা বেশ অদ্ভুত, তাই না?
এখানে এক বীর পালোয়ান
ইসরাইলিদেরকে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আমন্ত্রণ ছুঁড়ে দিচ্ছে।
তাঁকে কেন হাত ধরে যেতে হবে,
সম্ভবতঃ এক তরুন বালকের হাত ধরে,
লড়াই-এর স্থানের দিকে?
দ্বিতিয়তঃ, বাইবেলের কাহিনীতে বিশেষভাবে বিদ্ধৃত আছে
যে, গলিয়াথ কি রকম শ্লথগতির ছিল,
আরেকটি উদ্ভট ব্যাপার, যখন বর্ণনা করবেন
সে সময়কার সবচেয়ে শক্তিশালী পালোয়ানকে
আর সেখানেই রাজ্যের যত অদ্ভুত বিষয়
- প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য গলিয়াথ কতটা সময় নিয়েছিল,
যখন সে ডেভিডকে দেখলো।
তো, ডেভিড পাহাড় থেকে নেমে আসছে,
আর স্পষ্টতই সে কোনপ্রকার মল্লযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল না।
এমনটি কোথাও নেই যে সে বলছে,
"আমি তোমার সাথে এভাবে লড়তে যাচ্ছি।"
এমনকি তাঁর কাছে কোনও তলোয়ারও ছিল না।
এব্যাপারে কেন গলিয়াথের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই?
কী হতে যাচ্ছে এব্যাপারে মনে হচ্ছে সে যেন একেবারেই নিশ্চিত ছিল।
আর তারপর সে ডেভিডের প্রতি সেই অদ্ভুত মন্তব্যটি করলঃ
"আমি কুকুর নাকি যে তুমি লাঠিগুলো নিয়ে আমার কাছে এসেছ?"
লাঠিগুলো? ডেভিডের কাছে মাত্র একটি লাঠি ছিল।
বেশ, দেখা যাচ্ছে যে, এখানে যথেষ্ট মাত্রায়
জল্পনা-কল্পনা আছে, চিকিৎসক সমাজে, কয়েক বছর ধরে
যে সেখানে কি এমন কিছু ছিল যা
গলিয়াথ সম্পর্কে মূল ধ্যান ধারনার পরিপন্থী,
এই সব আপাত অসঙ্গতিসমূহ ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে
অনেক লেখালেখি হয়েছে
প্রথমটি ছিল ১৯৬০ সালের ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল জার্নালে,
আর সেখান থেকে জল্পনার ডালপালা গজাতে শুরু হয়,
প্রথমেই আসে গলিয়াথের উচ্চতার ব্যাপারটি।
তো, গলিয়াথ ছিল ঘাড়ে-মাথায় অনেক উঁচু
- তাঁর সময়ের যে কোনও যোদ্ধার চেয়ে।
আর সাধারণত যখন কেউ এতটা অস্বাভাবিক আকার ধারন করে,
তখন তার একটা ব্যাখ্যা থাকে।
তো, দানবীয়তার সবচেয়ে সাধারন রূপ
হল এক্রোমেগালি নামে পরিচিত একটি দশা,
আর এক্রোমেগালি হয়ে থাকে মস্তিষ্কের একটি টিউমারের কারনে
যেটি আপনার পিটুইটারি গ্রন্থিতে অবস্থান করে,
যার কারনে অতিরিক্ত পরিমানে হিউম্যান গ্রোথ হরমোন তৈরি হয়
আর ইতিহাস জুড়ে, বেশীরভাগ বিখ্যাত দানবদেরই
এক্রোমেগালি ছিল।
তাই সর্বকালের সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তিটি
ছিলেন রবার্ট ওয়াডলোও নামের একজন
যিনি ২৪ বছর বয়সে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত বেড়ে চলছিলেন
আর তিনি ছিলেন ৮ ফিট ১১ ইঞ্চি।
তাঁর এক্রোমেগালি ছিল।
দ্যা জায়ান্ট নামে পরিচিত কুস্তিগীর আন্দ্রের কথা মনে আছে?
সুবিখ্যাত। তাঁর এক্রোমেগালি ছিল।
এমনকি আব্রাহাম লিংকনেরও এক্রোমেগালি ছিল বলে কানাঘুষা শোনা যায়।
অস্বাভাবিক লম্বা যে কারোর বেলায়
সবার আগে এই ব্যাখ্যাতেই আমরা উপনীত হই।
আর এক্রোমেগালির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু সুস্পষ্ট
পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে,
প্রধানত দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত।
পিটুইটারির এই টিউমারটি যখন বড় হতে থাকে,
প্রায়শই মস্তিষ্কের দৃষ্টি সংশ্লিষ্ট স্নায়ুসমুহের উপর চাপ দিতে থাকে,
ফলশ্রুতিতে এক্রোমেগালি আক্রান্ত ব্যাক্তিরা
হয় ডাবল-ভিশন না হয় সাংঘাতিক রকমের হ্রস্ব-দৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে থাকেন।
তাই যখন লোকজন জল্পনা-কল্পনা শুরু করল
যে গলিয়াথের গোলমালটা কোথায় ছিল,
তাঁরা বলেছেন, "আরে দাঁড়ান!
এঁ তো দেখেতে শুনতে তাঁদের সাথে নিদারুন ভাবে মিলে যাচ্ছে
যাঁরা এক্রোমেগালিতে আক্রান্ত।"
আর এটার থেকে সেদিনের তাঁর অদ্ভুত আচরণের
অনেক কিছু স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়।
কেন সে এত শ্লথগতির ছিল
আর কেন তাঁকে হাতে ধরে উপত্যাকায় নামাতে হয়েছিল
পরিচারকের সহায়তায়?
কারন সে নিজে নিজে পথ চলতে পারতো না।
কেন সে ডেভিড সম্পর্কে এতটা বিস্ময়করভাবে অনবহিত ছিল
যে সে বুঝতে পারেনি যে ডেভিড তাঁর সাথে লড়তে আসেনি
- একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত?
কারণ সে দেখতে পেত না।
যখন সে বলে, "কাছে আয় যেন আমি তোর মাংস খাওয়াতে পারি
ঊর্ধ্বাকাশের পাখিদেরকে আর প্রান্তরের পশুদেরকে।"
এই "আমার কাছে আয়" কথাটিও তাঁর অক্ষমতা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়।
আমার কাছে আয় যেন আমি তোকে দেখতে পাই।
আর তারপরে, "আমি কি একটা কুকুর যে তুই লাঠিগুলি নিয়ে আমার কাছে এসছিস?"
সে দুইটা লাঠি দেখেছে যদিও ডেভিডের কাছে ছিল মাত্র একটা।
তাই, পাহাড়ের উপরে অবস্থান নেয়া ইসরাইলিরা
নীচে তাঁকে দেখে ভেবেছিল সে বোধহয়
এহেন মহা পরাক্রমশালী এক শত্রু।
তাঁরা যা বুঝতে পারেনি সেটা হল
তাঁর এই আপাত শক্তির উৎসের মধ্যেই
লুকিয়ে ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
আর আমি মনে করি যে এখানে
আমাদের জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে।
দেখে যতটা মনে হয়, দানবেরা ততটা শক্তিশালী বা ক্ষমতাধর নয়।
আর মাঝে মাঝে রাখালছেলের ঝুলিতে একটি গুলতি থাকে।
ধন্যবাদ।
(করতালি)