আপনারা হয়ত এই অনুভূতির সাথে পরিচিতঃ আপনি ঘুম ভেঙে দেখলেন আপনার মুঠোফোনে একগাদা নোটিফিকেশন আপনার ক্যালেন্ডারের দিনগুলো মিটিং এ ভর্তি কোনদিন দুটি এমনকি তিনটিও মিটিং আছে। আপনি কাজে নিযুক্ত অনুভব করেন, ব্যস্ত অনুভব করেন। আসলে, আপনি উৎপাদনক্ষম অনুভব করেন। কিন্ত এই সব কিছুর পরেও, কিসের যেন একটা শূন্যতা অনুভূত হয়। আপনি বোঝার চেষ্টা করেন সেটা কী। কিন্তু সেটা বুঝে ওঠার আগেই, আবার পরবর্তী দিনটির যাত্রা শুরু হয়ে যায়। দুই বছর আগে আমি ঠিক এমনটাই অনুভব করেছিলাম। আমি পীড়ন অনুভব করতাম, আমি উদ্বিগ্নতা অনুভব করতাম কিছুটা ফাঁদে আটকে পড়ার মত অনুভূতি। আমার চারপাশের পৃথিবী খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছিল। এবং আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করা উচিত আমি নিজে নিজে ভাবতে শুরু করলাম: আমি কীভাবে এই সব কিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারি? কীভাবে আমরা এমন একটা জগতে পরিপূর্ণতা খুজে পেতে পারি যেখানে সব কিছু আমাদের চিন্তার গতির সাথে পরিবর্তিত হয়, বা এমনি তার চেয়েও দ্রুততর পরিবর্তিত হয়? আমি উত্তরগুলো খুজতে শুরু করলাম। আমি অনেক মানুষের সাথে কথা বললাম, আমি আমার বন্ধুদের সাথে কথা বললাম, আমার পরিবারের সাথে কথা বললাম। আমি অনেক আত্মসহায়ক বইও পড়লাম। কিন্ত আমি সন্তোষজনক কোন কিছু খুজে পেলাম না। আসলে, আমি আত্মসহায়ক বইগুলো যত বেশি পড়েছি, আমি তত বেশি পীড়িত এবং উদ্বিগ্ন হয়েছি। (হাসি) ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে আমি আমার মনকে একগাদা জাঙ্ক ফুড খাওয়াচ্ছিলাম এবং আমি মানসিকভাবে মোটা হচ্ছিলাম। (হাসি) আমি প্রায় ছেড়েই দিচ্ছিলাম তারপর একদিন আমি এটা খুজে পেলাম "The Tao Te Ching: The Book of the Way and Its Virtue." এটা একটা প্রাচীন চীনা ধ্রুপদী দর্শন যেটা আজ থেকে ২৬০০ বছরেরও পূর্বে লিখিত হয়েছিল। এবং এটা আমার বইয়ের তাকের সবচেয়ে পাতলা এবং সবচেয়ে ছোট বই ছিল। এতে মাত্র ৮১ পৃষ্ঠা ছিল। এবং প্রতিটা পৃষ্ঠায় একটা করে ছোট কবিতা ছিল। আমার মনে পড়ে আমি একটা বিশেষ কবিতার পাতায় আটকে ছিলাম। সেটা হচ্ছে এই। সুন্দর, তাই না? (হাসি) আমাকে পুরোটা পড়ে শোনাতে দিন। "যা সর্বোচ্চ মঙ্গলময় তা ঠিক যেন জলের মতন। তা কোন তর্ক ছাড়াই সব কিছুর উপকার করে। থাকে তা মাটির কাছাকাছি। প্রবাহিত হয় গভীর থেকে গভীরে। প্রকাশে তা সৎ। সাক্ষাতে তা বিনয়ী। পরিচালনায় তা নিয়ন্ত্রণহীন। কার্যে তা সময়ানুগ। নিজ প্রকৃতির সাথে তা পরিতৃপ্ত। এবং সেকারণেই তাকে দোষারোপ করা যায় না। ওয়াও! আমি প্রথমবার এই অংশটুকু পড়ার কথা মনে করতে পারি। আমার শিরদাঁড়ায় আমি তীব্রতম শিহরণ অনুভব করেছিলাম। আজ আপনাদের এটি পড়ে শোনানোর সময়ও আমি একই রকম অনুভব করেছি। আমার উদ্বিগ্নতা এবং পীড়ন হঠাতই মিলিয়ে গিয়েছিল। সেই দিন থেকে, আমি আমার প্রাত্যহিক জীবনে এখানে থেকে যা শিখেছি তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করে আসছি। এবং আজ, আমি আপনাদের সাথে তিনটি শিক্ষা ভাগ করে নিতে চাই যা আমি এ পর্যযন্ত শিখেছি জলের দর্শন থেকে-- তিনটি শিক্ষা আমি বিশ্বাস করি যেগুলো আমাকে বৃহত্তর পরিপূর্ণতা খুজে পেতে সাহায্য করেছে আমি যা কিছু করি তার প্রায় সবকিছুতেই। প্রথম শিক্ষাটি নম্রতা সম্পর্কে। আমরা যদি নদীতে প্রবাহিত হতে থাকা জলের কথা চিন্তা করি, এটি সর্বদাই নিম্নস্তরে থাকছে। এটি সমস্ত উদ্ভিদকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করছে এবং সমস্ত প্রাণিকে জীবিত রাখছে। এটি না নিজের দিকে কোন মনোযোগ আকর্ষণ করে, না এর কোন পুরস্কার বা স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে। এটি বিনয়ী। কিন্ত জলের বিনয়ী অবদান ব্যতীত, প্রাণকে আমরা যেভাবে জানি তার হয়তো অস্তিত্বই থাকত না। জলের নম্রতা আমাকে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখিয়েছে। এটা আমাকে শিখিয়েছে এমনভাবে কাজ করার পরিবর্তে যেন আমি জানি আমি যা করছি কিংবা আমি সব কিছুরই উত্তর জানি, এটা বলা একদমই ঠিক যে, "আমি জানি না। আমি আরও শিখতে চাই, এবং তোমার সাহায্য আমার দরকার।" এটা আমাকে আরও শিখিয়েছে যে, আমার গৌরব এবং সাফল্য প্রচার করার পরিবর্তে, অন্যের গৌরব এবং সাফল্য প্রচার করাটা অনেক বেশি সন্তুষ্টিজনক। এটা আমাকে শিখিয়েছে যে, আমার নিজের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করার পরিবর্তে এটা অনেক বেশি অনেক পূর্ণতাদায়ক এবং অর্থপূর্ণ হয় অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে যেন তারা তাদের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে সফল হতে পারে। একটি বিনয়ী মনোভাব নিয়ে, আমি আমার চারপাশের মানুষদের সাথে আরো সমৃদ্ধতর যোগাযোগ তৈরি করতে পেরেছিলাম। আমি সত্যিকার অর্থেই অন্যদের গল্প এবং অভিজ্ঞতার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিলাম যেগুলোর জন্য তারা অনন্য এবং অসাধারণ। জীবন আরো মজাদার হয়ে উঠেছিল, কেননা প্রতিদিনই আমি নতুন কোন অভ্যাদ, নতুন ধারণা এবং বিভিন্ন সমস্যার নতুন সমাধান আবিষ্কার করতাম যেগুলো আমি আগে জানতাম না, সমস্ত ধন্যবাদ সে সমস্ত আইডিয়া এবং সাহায্য যা আমি অন্যদের কাছ থেকে পেয়েছি। সব স্রোতই শেষ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে মেশে কেননা সমুদ্র অন্য সব স্রোতের চেয়ে নিম্ন স্তরে অবস্থান করে। নম্রতা জলকে তার শক্তি প্রদান করে। কিন্তু আমি মনে করি এটা আমদের মাটির কাছাকাছি থাকার ক্ষমতা প্রদান করে, বর্তমান থাকার, এবং আমাদের চারপাশের মানুষদের গল্পগুলো থেকে শেখার এবং রূপান্ততিত হবার। দ্বিতীয় যে শিক্ষাটি আমি পেয়েছি সেটি সঙ্গতি বা সামঞ্জস্য সম্পর্কে। আমরা যদি একটা পাথরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকা জলের স্রোতের কথা চিন্তা করি, তা পাথরের চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত হবে। এটি মর্মাহত হবে না, এটি রেগে যাবে না, এটি উত্তেজিত হবে না। এমনকি, এটি তেমন কিছু অনুভবও করে না। যখন জল কোন বাধার সম্মুখীন হয়, কোন না কোনভাবে জল একটা সমাধান বের করে, কোন বলপ্রয়োগ, কোন সংঘর্ষ ছাড়াই। আমি যখন এসব ভাবনাগুলোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, আমি বুঝতে শুরু করলাম কেন আমি প্রথমে পীড়িত অনুভব করছিলাম। আমি আমার পরিমণ্ডলের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার পরিবর্তে আমি এর বিপরীতে কাজ করছিলাম। আমি সবকিছুকে পরিবর্তন করার জন্য চাপ দিচ্ছিলাম কেননা আমি বিভোর হয়েছিলাম সফল হবার বাসনা বা নিজের সামর্থ্য প্রমাণের তাড়নার মাঝে। শেষটায় কিছুই করতে পারিনি। এবং আমি আরো হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। শুধু আমার মনোযোগের কেন্দ্র আরো সাফল্য অর্জনের চেষ্টা থেকে সরিয়ে অধিকতর সমন্বয় অর্জনের দিকে স্থাপন করায় আমি তাৎক্ষণিকভাবেই শান্ত এবং পুনরায় মনোসংযোগকৃত অনুভব করতে পেরেছিলাম। আমি এধরনের প্রশ্ন করতে শুরু করলামঃ আমার এই কাজটি কি বৃহত্তর আমার জন্য কোন সঙ্গতি নিয়ে আসবে এবং আমার পরিমণ্ডলে বৃহত্তর কোন সঙ্গতি নিয়ে আসবে? এটি কি আমার প্রকৃতির সাথে সাজুয্যপূর্ণ? আমি আসলে যা তাই হওয়ার সাথে আরো স্বস্তি অনুভব করতে শুরু করলাম, বরং আমার যা হওয়া উচিত বা বা আমি যা হতে প্রত্যাশিত তার থেকে। বাস্তবিক অর্থে কাজ সহজ হয়ে উঠেছিল, কেননা আমি যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না সেখানে মনোসংযোগ করা বন্ধ করেছিলাম এবং শুধু সেসব জিনিসেই করতাম যেখানে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। আমি আমার নিজের সাথে যুদ্ধ করা বন্ধ করেছিলাম, এবং আমার পরিমণ্ডলের সাথে কাজ করতে শিখেছিলাম সেখানকার সমস্যাগুলো সমাধান করার উদ্দেশ্যে। প্রকৃতি তাড়াহুড়ো করে না। তা সত্ত্বেও সমস্ত কিছুই সাধিত হয়। এভাবেই তাও তে চিং সামঞ্জস্যের ক্ষমতা বর্ণনা করে। ঠিক যেমন জল কোন বল প্রয়োগ কিংবা সংঘর্ষ ছাড়াই একটা সমাধান খুজে বের করতে সক্ষম হয়, আমি বিশ্বাস করি আমরা আমদের উদ্যমের মাঝে একটি বৃহত্তর পরিপূর্ণতাবোধ খুজে পেতে পারি আমাদের মনোসংযোগ অধিকতর সাফল্য অর্জন থেকে সরিয়ে অধিকতর সামঞ্জস্য অর্জনের দিকে রাখার মাধ্যমে। তৃতীয় যে শিক্ষাটি আমি জলের দর্শন থেকে শিখেছি সেটি অকপটতা, অসংকোচ, উন্মুক্ততা সম্পর্কে। জল পরিবর্তনে অসঙ্কোচ, মুক্ত। তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে এটি তরল, কঠিন বা বায়বীয় হতে পারে। এটি কোন মাধ্যমে আছে তার উপর নির্ভর করে, হতে পারে সেটা একটা চায়ের পাত্র, একটা কাপ বা ফুলদানি। আসলে জলের এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া এবং নমনীয় থাকতে পারার ক্ষমতা তাকে যুগের পর যুগ ধরে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে, পরিবেশেরর হাজারোটা পরিবর্তন সত্ত্বেও। আমরা আজ সতত পরিবর্তনশীল একটা জগতে বাস করছি আমরা এখন আর একটা নির্দিষ্ট বর্ণনার চাকরি করতে প্রত্যাশা করতে পারি না কিংবা একটি একক ক্যারিয়ার পথ অনুসরণ করতে পারি না। আমরাও প্রতিনিয়ত আমাদের পুনরাবিষ্কার করতে এবং আমাদের দক্ষতাগুলো ঝালিয়ে নিতে প্রত্যাশিত প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য। আমাদের প্রতিষ্ঠানে, আমরা অনেক হ্যাকাথন আয়োজন করি, যেখানে ছোট ছোট দল কিংবা কিছু মানুষ একত্রিত হয় একটা সঙ্কুচিত সময়সীমার মধ্যে একটা ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য। এবং আমার কাছে যে ব্যাপারটা মজাদার লাগে সেটা হচ্ছে যে দলগুলো সাধারণত জেতে এমন নয় যে সেই দলগুলোতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ সদস্য থাকে, বরং সেই দলগুলো যেগুলোর সদস্যরা শেখার প্রতি মুক্ত মনোভাব পোষণ করে, যারা ভুলে যাওয়ার প্রতি মুক্ত মনোভাব পোষণ করে এবং যারা একে অন্যকে সাহায্য করার প্রতি মুক্ত মনোভাব পোষণ করে যারা পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাত্রা করে। জীবন কিছু দিকে দিয়ে অনেকতা হ্যাকাথনের মতন। এটা আমাদের একে অপরকে এবং প্রত্যেককে ডেকে নেওয়া আরেক ধাপ উপরে যাওয়ার জন্য, অকপট অসঙ্কোচ হবার জন্য এবং একটা তরঙ্গায়িত ফলাফল আনার জন্য। এখন, আমরা বন্ধ দরজার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারি এবং অসাড় হয়ে থাকতে পারি আমাদের নিজস্ব সীমাবদ্ধ বিশ্বাস দ্বারা, যেমনঃ "আমি কখনোই বিশাল জনসভার সামনে চৈনিক দর্শন নিয়ে কথা বলতে পারব না" (হাসি) অথবা আমরা শুধুই অসঙ্কোচ হতে পারি এবং যাত্রাটা উপভোগ করতে পারি। এটা কেবলই একটা বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা হতে পারে। তো নম্রতা(humility), সামঞ্জস্য(harmony) এবং অসঙ্কোচ(openness)। এই হচ্ছে সেই তিনটি শিক্ষা যা আমি এখন পর্যন্ত জলের দর্শন থেকে শিখেছি। সেগুলো খুব সুন্দরভাবে সংক্ষিপ্ত হয় H-H-O, অথবা H2O. (হাসি) এবং এগুলো আমার জীবনের চালনাকারী নীতিতে পরিণত হয়েছে। তাই এখন, যখনই আমি পীড়িত অনুভব করি, অপরিপূর্ণ, উদ্বিগ্ন অনুভব করি কিংবা স্রেফ বুঝে উঠতে পারি না যে কী করতে হবে, আমি শুধু এই প্রশ্নটা করিঃ এমন অবস্থায় জল কী করত? (হাসি) একটা বই থেকে অনুপ্রাণিত এই সাধারণ এবং শক্তিশালী প্রশ্ন যে বই লিখিত হয়েছে বিটকয়েন, ফিনটেক আর ডিজিটাল টেকনোলজির অনেক অনেক আগের যুগে তা আমার জীবনকে অধিকতর ভালো কিছুর জন্য পরিবর্তন করেছে। এটা প্রয়োগ করে দেখুন, এবং আমাকে জানান এটা আপনার জন্য কেমন কাজ করছে। আমি আপনাদের কাছে থেকে শোনার জন্য উদগ্রীব থাকব। ধন্যবাদ। (করতালি)