এই ক্যারিয়ার জটিলতা, আমার বেলায় যা প্রায়ই ঘটে,
প্রায়ই, বিশেষত, রোববার সন্ধ্যায়,
ঠিক যখন সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে,
এবং যখন আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্খাগুলো
আর আমার জীবনের বাস্তবতার মাঝে দুরত্ব, এত কষ্টদায়কভাবে উঠে আসে যে
শেষ পর্যন্ত বালিশে মুখ গুঁজে আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি।
আমি এত সব বলছি,
এত সব বলছি এজন্যই যে এটা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কোন সমস্যা নয় বলেই আমি মনে করি ।
আপনি হয়ত ভাবতে পারেন আমি ভুল বলছি,
কিন্তু আমার মনে হয় আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি যখন আমাদের জীবন নিয়মিতভাবেই
আক্রান্ত হচ্ছে ক্যারিয়ার সংকটে,
মূহুর্তেই যখন আমরা
আমাদের জীবন ও আমাদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে যা জানি বলে ভাবতাম
তা এক ভীতিকর বাস্তবতার মুখোমুখি পৌছায়।
অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন সম্ভবত সুন্দরভাবে জীবনযাপন করা সহজতর।
সম্ভবত বর্তমানেই পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায়,
ধীর স্থির থাকা,ক্যারিয়ার বিষয়ক দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা সবচেয়ে কঠিন।
আমি এখন তাকাতে চাই
সেইসব কিছু কারণের দিকে যেগুলোর জন্য
আমরা আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ।
কেন আমরা ক্যারিয়ার সংকটের শিকার হচ্ছি?
কেনই বা আমরা আলতো করে বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি।
আমাদের এই কষ্টের একটি কারণ হল
আমাদেরকে ঘিরে থাকা অহংকারী লোকজন।
এখন আমার কিছু দুঃসংবাদ দেয়ার আছে,
বিশেষ করে যারা বাইরে থেকে অক্সফোর্ডে এসেছেন।
দম্ভের একটা সত্যিকারের সমস্যা আছে।
কারণ মাঝেমাঝে যুক্তরাজ্যের বাইরের মানুষজন কল্পনা করেন --
যে দম্ভ হচ্ছে বিলেতি লোকেদের বৈশিষ্ট্যমূলক ব্যাপার
একে তাঁদের দেশের বাড়ি আর উপাধির সাথে সম্পর্কিত করে ফেলেন।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে সেটা সত্য নয়।
উন্নাসিকতা একটি বৈশ্বিক ব্যাপার।
আমরা একটি বৈশ্বিক সংস্থা। এটা একটা বৈশ্বিক ব্যাপার।
এটা বিদ্যমান। উন্নাসিকতা মানে কী?
উন্নাসিক/দাম্ভিক হচ্ছে সে, যে আপনার সম্পর্কে খুব অল্প জানে
এবং সেই ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে সে আপনার সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা কল্পনা করে নেয়।
সেটাই উন্নাসিকতা।
একটি বহুল প্রচলিত উন্নাসিকতা
যা বর্তমানে বিদ্যমান তা হল পেশাবিষয়ক উন্নাসিকতা।
যেকোন পার্টিতে গেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনাকে এর মুখোমুখি হতে হয়।
আপনি যখন প্রশ্নবিদ্ধ হন
একবিংশ শতাব্দীর সেই সুপরিচিত প্রশ্নের, "আপনি কি করেন?"
এবং আপনার উত্তর অনুযায়ী,
কেউবা আপনার সাথে দেখা হয়ে অত্যধিক আনন্দিত হন,
আর কেউবা নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কেটে পড়ার অজুহাত দেন।
(হাসি)
এখন উন্নাসিক ব্যক্তির বিপরীতে কাউকে দাঁড় করাতে চাইলে তিনি হবেন আপনার মা।
(হাসি)
আপনার মাকেই যে হতে হবে তা নয়, আমার মাও হতে পারে,
কিন্তু, একজন আদর্শ মায়ের মতই,
যিনি আমাদের সফলতা নিয়ে মাথা ঘামান না।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অধিকাংশ মানুষই আমাদের মা নন।
বেশিরভাগ মানুষ বেশ কঠোরভাবেই সামঞ্জস্য রাখে তার ব্যয়িত সময়
এবং ভালোবাসা, -- রোমান্টিক ভালোবাসা নয়,
যদিও সেটাও একটা ব্যাপার --
সর্বজনীন ভালোবাসা, সম্মান,
তারা আমাদের জন্য যতটুকু করতে ইচ্ছুক, বেশ কঠোরভাবেই তা সীমিত রাখেন
আমাদের সামাজিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে।
আর আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার এগুলোই অনেক বড় কারণ
এবং অবশ্যই পার্থিব সামগ্রী নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠারও একই কারণ।
আপনারা প্রয়ই শুনে থাকবেন, যে আমরা অত্যন্ত বস্তুবাদী এক সময় অতিবাহিত করছি,
আমরা সবাই অনেক লোভী মানুষ।
আমি আমাদেরকে বিশেষ করে বস্তুবাদী বলে মনে করি না।
আমার মনে হয় আমরা যে সমাজে বসবাস করছি
যে সমাজ খুব সাদামাটাভাবে নির্দিষ্ট কিছু আবেগিক প্রতিদানকে
পার্থিব সামগ্রীর অর্জন হিসেবে চিহ্নিত করে।
আসলে পার্থিব বস্তু আমরা চাইনা। আমাদের চাওয়া হচ্ছে ঐ পুরষ্কার।
আর বিলাসদ্রব্যের কথা ভাবার এটি একটি নতুন উপায়।
এখন থেকে কাউকে ফেরারীতে (দামী গাড়ি) চড়ে বেড়াতে দেখলে
ভাববেন না যে, "ইনি একজন লোভী মানুষ।"
বরং ভাবুন, "ইনি হলেন অস্বাভাবিকরকম কমজোর এবং ভালোবাসার কাঙ্গাল।"
অন্যভাবে বললে -- (হাসি)
ঘৃণার বদলে সমবেদনা দেখান।
এছাড়াও আরও কারণ আছে --
(হাসি)
অন্য অনেক কারণ আছে, যে জন্য সম্ভবত আজকাল কঠিনতর হয়ে গেছে
আগের যেকোন সময়ের থেকে সুস্থির থাকা।
একটি কারণ হচ্ছে ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা, এটা নিয়ে অবশ্য মতবিরোধ আছে
কারণ ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের এই প্রত্যায়াশাকে ভালো নজরে দেখা হয়।
মানুষের ইহকালের অর্জন নিয়ে এর আগে
এত সুউচ্চ প্রত্যাশা আর কখনই ছিল না।
বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা শুনে থাকব যে, যেকারো পক্ষেই যেকোন কিছু অর্জন করা সম্ভব ।
আমরা সামাজিক শ্রেণীতন্ত্রের যুগ পার করে এসেছি।
আমরা এখন যে সিস্টেমে বাস করছি তাতে যে কেউই চাইলে
যে কোন উঁচু পর্যায়ে উঠে যেতে পারে।
এটা একটা চমৎকার আইডিয়া।
পাশাপাশি এটা একটা সাম্যবাদী চেতনা। আমরা সবাই আসলে সমান।
শ্রেণীবিভাগের কোন স্পষ্ট প্রকট
ব্যবস্থা এখন আর নাই।
এর অবশ্য সত্যিকারের একটা বড় সমস্যা আছে,
আর সেটা হল ঈর্ষা।
ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতার কথা বলা আবার নিষিদ্ধ,
কিন্তু আধুনিক সমাজে বহুল প্রচলিত কোন আবেগ যদি থেকে থাকলে সেটা অবশ্যই ঈর্ষা।
আর এটা সাম্যবাদী চেতনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমি বুঝিয়ে বলছি,
আমার মনে হয় এখানে উপস্থিত অথবা যারা দেখছেন সবার ক্ষেত্রেই,
ইংল্যাণ্ডের রাণীর প্রতি ঈর্ষাণ্বিত হওয়াটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার।
যদিও আপনাদের যে কারও তুলনায় তিনি অনেক বেশি ধনী।
এবং তার একটা বিশাল বাড়ি আছে।
আমাদের তার প্রতি ঈর্ষাণ্বিত না হওয়ার কারণ হল তিনি খুবই অন্যরকম।
তিনি আসলেই খুব অদ্ভুত।
তার সাথে কোন তুলনা চলে না। তিনি হাস্যকরভাবে কথা বলেন।
তিনি এসেছেন এক অদ্ভুত জায়গা থেকে।
তাই আমরা তার সাথে কোন তুলনা করি না। আর যখন কারও সাথে তুলনা করা যায় না, তাকে ঈর্ষাও করা যায় না।
বয়স কিংবা অতীত কিংবা পরিচিতির দিক থেকে দুটো মানুষ যত কাছাকাছি,
ঈর্ষার উদ্ভব হওয়ার ভয়ও তত বেশি --
প্রসঙ্গক্রমে একারণেই স্কুল পুনর্মিলনীতে আপনাদের কখনই যাওয়া উচিত নয়।
কারণ তুলনা করার জন্য
সহপাঠিদের চেয়ে সুবিধাজনক আর কেউ নয়।
কিন্তু আধুনিক সমাজের সাধারণ সমস্যা হল, এটা পুরো পৃথিবীটাকেই একটা স্কুল
বানিয়ে ফেলেছে। সবাই জিনসের প্যান্ট পরছে, সবাই এক।
আবার, তারা সমান নয়।
সাম্যের সাথে অসাম্য গভীরভাবে সম্পর্কিত হয়ে আছে।
যেটা ভীষণ চাপের সৃষ্টি করে, করতে পারে ।
সপ্তদশ শতাব্দীতে ফরাসী অভিজাত শ্রেণীর অঙ্গীভূত হতে পারা যেরকম
অসম্ভব ছিল, তেমনি বর্তমানে
বিল গেটসের মত ধনী হওয়াটাও
সম্ভবত একই রকম অসম্ভব।
কিন্তু ব্যাপার হল, আমরা এখন সেভাবে অনুভব করি না।
আমাদেরকে অনুভব করতে বাধ্য করা হচ্ছে, ম্যাগাজিন, মিডিয়া, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে,
যদি আপনার এনার্জি থাকে, প্রযুক্তিবিষয়ক কিছু বুদ্ধিদীপ্ত আইডিয়া থাকে,
একটা গ্যারেজ থাকে, আপনিও বড় কিছু শুরু করে দিতে পারেন।
(হাসি)
আর এর পরিণাম অনুভূত হয় বইয়ের দোকানে গিয়ে।
বড় কোন বইয়ের দোকানে গিয়ে স্বাবলম্বিতা বিষয়ক সেকশনের দিকে তাকালে,
যেটা আমি প্রায়ই করে থাকি,
আজকাল স্বাবলম্বিতা বিষয়ে প্রকাশিত বইগুলোর দিকে তাকালে
দেখা যায়, শুধু দুই ধরণের বই আছে,
প্রথম ধরণের বইয়ে বলা হয়ে থাকে, "আপনি পারবেন। আপনাকে দিয়েই হবে। সবকিছু সম্ভব।"
দ্বিতীয় ধরণের বইয়ে আত্মবিশ্বাসহীনতা
কাটিয়ে উঠার উপায় সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে; সহজভাবে বললে একে 'আত্মস্পৃহার অভাব',
একটু রূঢ় ভাবে একে বলা যায় "নিজের ব্যাপারে অনেক নিচু ধারণা থাকা"।
এই দুই এর মধ্যে সত্যিকারের একটা সম্পর্ক আছে,
একটা সমাজ যা তার মানুষকে বলতে থাকে তাদের দিয়ে সব সম্ভব এবং একই সাথে
আত্মবিশ্বাসের অভাবের অস্তিত্ত্ব থাকা -এই দুয়ের মাঝে আসলেই সম্পর্ক আছে।
তাই এটা আসলে একটা প্রায় পুরোপুরি ঠিক ব্যাপারেও
যে বাজে প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে তারই উদাহরণ।
সম্ভবত আরেকটি কারণে আমরা আরও বেশি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছি
আজকের দুনিয়াতে আগের চেয়ে অনেক বেশি আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে, সামাজিক পদমর্যাদা নিয়ে।
এটা আবার বেশ সুন্দর একটা ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত,
সেই সুন্দর ধারণাটা হচ্ছে গুণতন্ত্র।
সবাই - বামপন্থী, ডানপন্থী রাজনীতিবিদ সবাই,
স্বীকার করবে যে, গুণতন্ত্র হচ্ছে একটা অসাধারণ ব্যাপার।
এবং আমাদের সকলেরই আমাদের সমাজকে আরও বেশি বেশি গুণতান্ত্রিক করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করা উচিত।
গুণতান্ত্রিক সমাজ বলতে আসলে কি বোঝায়?
গুণতান্ত্রিক সমাজে যেকেউই
মেধা, শক্তি আর সামর্থ থাকলে
সবচেয়ে উঁচু অবস্থানে পৌঁছতে পারে। কোনকিছুই তাকে বাধা দিতে পারে না।
এটা একটা চমৎকার আইডিয়া। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে
যদি আপনি সত্যিই এমন একটি সমাজে বিশ্বাস করেন
যেখানে মেধা থাকলেই উঁচুস্তরে ওঠা যায়, অনেক উঁচুস্তরে ওঠা যায়,
আপনি কিন্তু একই সাথে এটাও ইঙ্গিত করছেন, খুব বাজেভাবে বললে,
আপনি এমন একটি সমাজে বিশ্বাস করছেন যেখানে কেউ কেউ
অযোগ্যতার কারণে নীচুস্তরে থাকতে বাধ্য।
একটু ঘুরিয়ে বললে, আপনার জীবনে আপনার অবস্থান আকস্মিক কোন কিছু নয়,
বরং আপনার মেধার গুণে অর্জিত এবং যথোচিত।
আর এতে করে ব্যর্থতাকে আরও ভীষণ কষ্টকর বলে মনে হয়।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন, মধ্যযুগে, ইংল্যাণ্ডে,
খুব গরীব মানুষকে দেখলে,
তাকে বলা হত "দুর্ভাগা"।
আক্ষরিক অর্থে, যার ভাগ্য খুব খারাপ, সে এককথায় দুর্ভাগা।
বর্তমানে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে
সমাজের নীচু স্তরের কাউকে দেখলে
তাদেরকে সম্ভবত বেশ নির্দয়ভাবেই "লুজার" বলে আখ্যায়িত করা হয়।
একজন হতভাগ্য ব্যক্তি আর একজন পরাজিত ব্যক্তির মাঝখানে অনেক ফারাক।
আর তা প্রকাশ করে ৪০০ বছরধরে পরিবর্তণশীল সমাজকে
আর আমাদের জীবনের পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী সেই বিশ্বাসকে।
এখন এটা আর ঈশ্বর নন, বরং আমরাই। আমরাই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছি।
যদি সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলে তাহলে তা খুবই উল্লাসজনক,
কিন্তু ব্যাপক বিপদ যখন তার উলটোটা ঘটে ।
এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, সমাজবিদ এমিল ডারখাইমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী,
একেবারে নিকৃষ্ট পর্যায়ে, আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বের অন্য যেকোন স্থানের তুলনায় উন্নত স্বতন্ত্রবাদী দেশগুলোতে
আত্মহত্যার ঘটনা অনেক বেশি।
এবং এর কারণ হল, মানুষ তার জীবনে ঘটিত ব্যাপারগুলোকে
খুবই ব্যক্তিগতভাবে নেয়।
তাদের সাফল্যের পেছনে আছে তারা নিজেরা ।তাদের ব্যর্থতার পেছনেও তারা নিজেরাই ।
আমি এতক্ষণ যেসব মানসিক চাপের কথা বললাম
তার থেকে মুক্তির কি কোন উপায় আছে?
মনে হয় আছে। আমি কিছু উপায়ের প্রতি আলোকপাত করতে চাই।
গুণতন্ত্রের কথাই ধরা যাক।
এই আইডিয়া যাতে বলা হচ্ছে, প্রত্যেকে যে যার অবস্থানে বর্তমানে আছে, সেটাই আসলে তার প্রাপ্য অবস্থান।
আমার মনে হয় এটা একটা ফালতু আইডিয়া, পুরোপুরি পাগলামি।
আমি বামপন্থী কিংবা ডানপন্থী যে কোন রাজনীতিবিদকেই
যেকোন মার্জিত গুণতান্ত্রিক আইডিয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন করব।
আমি নিজেই গুণতান্ত্রিক, ওই অর্থে।
কিন্তু আমি মনে করি প্রকৃত গুণতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করাটা
অপ্রকৃতিস্থ। এটা অসম্ভব স্বপ্ন।
এমন একটা সমাজের আইডিয়া যেখানে
আক্ষরিকভাবে সবাই এমনভাবে বিন্যস্ত
যেখানে যোগ্যরা উঁচুতে আর আযোগ্যরা নীচুতে,
এবং তা যেভাবে হওয়া উচিৎ সেভাবেই হচ্ছে, এমনটা হওয়া অসম্ভব।
এলোমেলো ভাবে অনেক রকমের পরিস্থিতিরই জন্ম হতে পারে।
দুর্ঘটনা, জন্ম সংক্রান্ত দুর্ঘটনা,
মানুষের জীবনে আসা আকস্মিক দুর্ঘটনা, রোগব্যধি ইত্যাদি।
আমরা কখনই সেগুলোকে সমাজে বিন্যস্ত করতে পারব না।
ঔচিত্য অনুসারে মানুষকে কখনই বিভাজিত করতে পারব না।
"ঈশ্বরের নগরী" তে সেন্ট অগাস্টিনের একটা চমৎকার উদ্ধৃতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
যেখানে তিনি বলেছেন, "কোন মানুষকে তার পদমর্যাদানুযায়ী বিচার করা পাপ।"
আধুনিক ইংরেজিতে সেটার অর্থ দাঁড়াবে,
কারও সাথে কথা বলা উচিৎ নাকি অনুচিৎ -সেটা
তার বিজনেস কার্ড দেখে ভেবে নেয়াটা একটা পাপ।
মানুষের পদমর্যাদাকে এত গুরুত্ব দেয়া উচিত নয়।
সেন্ট অগাস্টিনের কথানুসারে,
প্রত্যেকটা জিনিসকে তার যথোপযুক্ত জায়গায় অধিষ্টিত করতে শুধু ঈশ্বরই পারেন।
মহাবিচারের সেই দিনেই তিনি সেটা করবেন
দেবদূতদের নিয়ে শিঙ্গা ফুঁকে, আকাশ হয়ে যাবে উন্মুক্ত।
উন্মাদের চিন্তা, আমার মত, আপনিও যদি ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে থাকেন।
তা সত্ত্বেও এই আইডিয়াতেও কিছু মূল্যবান ব্যাপার আছে।
অন্যকথায়, মানুষকে বিচার করার সময় যেন তা লাগামছাড়া না হয়ে যায়।
একটা মানুষের সত্যিকারের মূল্য কখনই জেনে উঠা সম্ভব নয়।
সেটা সবার নিজেদের অজ্ঞাত ব্যাপার।
সেটা আমরা জেনে ফেলেছি বুঝিয়ে দেয়াটা অনুচিত।
সান্ত্বনা এবং স্বস্তির উৎস আরও একটি আছে।
আমরা যখন জীবনে ব্যর্থ হওয়ার কথা ভাবি, ব্যর্থতার কথা ভাবি,
শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ই নয়,
সম্মান হারানোর ভয়ও অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি।
অন্য মানুষের বিচার আর ব্যঙ্গকেও আমরা ভয় পাই। এবং এটা সত্যিই আছে।
এখনকার এক নম্বর ব্যঙ্গাত্মক সংগঠন হিসেবে
আপনারা সংবাদপত্রগুলোর কথা তো জানেন।
সপ্তাহের যে কোন দিনের সংবাদপত্র খুললেই
আপনারা অনেক মানুষের বিপরযস্ত জীবনের চিত্র দেখতে পাবেন।
কেউ ভুল মানুষের সাথে শুয়েছে। কেউ ভুল জিনিস গ্রহণ করেছে।
ভুল আইন প্রণীত হয়েছে। যে কোনটাই হোক।
ব্যঙ্গ করার জন্য যথেষ্ট।
এককথায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। এবং তাদেরকে পরাজিত হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
এখন এর বিকল্প কি কিছু আছে?
আমি মনে করি পাশ্চাত্য ঐতিহ্য থেকেই আমরা অতি চমৎকার বিকল্প খুঁজে পাব,
সেটা হল ট্রাজেডি।
বিয়োগান্তক শিল্প, যার বিকাশ ঘটেছে গ্রীসের নাট্যশালায়,
পঞ্চদশ খ্রিষ্টপূর্বে, বিয়োগান্তক শিল্প হচ্ছে এমন একটা অপরিহার্য শিল্প
যেখানে মানুষের ব্যর্থতাকে চিত্রায়িত করা হয়,
এবং তাদের মতে, কিছুটা সমবেদনা দেখানো হয়।
নিত্যকার জীবনে যেটা সাধারণত ঘটে না।
কয়েক বছর আগের কথা আমার মনে পড়ছে যখন আমি এই সব ব্যাপার নিয়ে ভাবছিলাম।
আমি "দ্য সানডে স্পোর্ট" দেখতে গিয়েছিলাম,
একটা ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র, যেটা পড়ার পরামর্শ কিন্তু আমি আপনাদেরকে দিচ্ছি না,
যদি না এর কথা আপনারা ইতিমধ্যেই জেনে থাকেন।
আমি ওদের সাথে
পাশ্চাত্য শিল্পের কিছু অসাধারণ ট্রাজেডির ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলাম।
আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে, একটা অন্তঃসারশূন্য ঘটনাকে
শনিবার বিকেলে খবরের ডেস্কে সংবাদ হিসেবে আনতে হলে
তাদেরকে কিভাবে সেটা সাজাতে হয় ।
আমি তাদেরকে ওথেলোর গল্প বললাম। তারা ওথেলোর কথা জানত না, কিন্তু তারা বেশ উৎসাহিত হল।
(হাসি)
আমি তাদেরকে ওথেলোর গল্পকে খবরের শিরোনাম হিসেবে রাখতে বললাম।
তারা সেটাকে বানালো "প্রেমান্ধ অভিবাসীর হাতে সিনেটরের কন্যা নিহত"
খবরের শিরোনাম জুড়ে চাপিয়ে বসলো।
আমি তাদের মাদাম বভারির ঘটনাকে প্লট হিসেবে দিলাম।
যেটা তাদেরকে খুব আগ্রহী করে তুলেছিল।
আর তারা লিখল "ক্রেডিট প্রতারণার পর শপিং প্রেমী যূবতীর আর্সেনিক গিলে আত্যহত্যা"
(হাসি)
এর পরেরটা আমার সবচেয়ে পছন্দের|
এই লোকগুলো, এদের নিজেদের মত করে (এরকম ঘটনা বিকৃত করার ব্যাপারে) একেকটা প্রতিভা|
এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় - সফোক্লিসের "মহান রাজা অডিপাস"
"মায়ের সাথে সেক্স অন্ধত্বের কারণ"
(অট্যহাসি)
(হাততালি)
এক দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি স্পেকট্রামের এক প্রান্তে সহানুভুতিকে রাখা হয়
তাহলে আসবে ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র।
স্পেক্ট্রামের অন্য প্রান্তে থাকবে ট্রাজেডি আর ট্রাজিক (বিয়োগান্তক) শিল্প।
আমার ধারণা আমি ট্রাজিক শিল্পে কি ঘটছে তা আমাদের সবার কিছুটা হলেও
যে শেখা উচিৎ সে ব্যাপারে বলতে চাচ্ছি।
হ্যামলেটকে হতভাগা বলতে পারা এক উন্মাদ হলেই সম্ভব।
হ্যামলেটের ভাগ্য যদিও খারাপ ছিল, তারপরেও তাকে 'লুজার' বলা যায় না।
আর আমি মনে করি ট্রাজেডি আমাদেরকে ঠিক এই শিক্ষাটাই দিচ্ছে।
এবং এটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি বুঝতে পারি।
আধুনিক সমাজের আরেকটা ব্যাপার
আর এই যে এত উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে,
আমাদের সমাজে এমন কিছু নাই যার কেন্দ্রে মানুষ নাই।
আমরাই বিশ্বে প্রথম সমাজ
যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের কে ছাড়া আর কাওকে পূজা করিনা।
নিজেদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা অনেক উচু| আর আমাদের সেরকমই হওয়া উচিত।
চাঁদে আমরা মানুষ পাঠিয়েছি। আমরা অসাধারণ অনেক কিছুই করেছি।
তাই আমাদের নিজেদের পূজা করার প্রবণতা তৈরী হয়েছে।
আমাদের বীরেরা সবাই মানুষ।
এটা সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিস্থিতি।
অধিকাংশ সমাজেই এর কেন্দ্রে
অপার্থিব কিছুর উপাসনা চলে। খোদা,
আত্মা, প্রাকৃতিক শক্তি, মহাবিশ্ব,
যা কিছুই হোক মানুষ ভিন্ন অন্য কিছুর উপাসনা করা হয়।
আর আমরা কিছুটা হলেও সেই অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছি,
আমার মনে হয়, একারণেই আমরা বিশেষত প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট হই।
স্বাস্থ্যের ওয়াস্তে নয়, যদিও প্রায়ই সেরকম দোহাই দিয়েই এটাকে উপস্থাপন করা হয়,
কারণ মানব বসতি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার এটা একটা উপায়।
আমাদের নিজেদেরই সৃষ্ট প্রতিযোগিতা থেকে নিষ্কৃতির পথ।
এবং আমাদের নাটকীয়তা থেকেও।
আর সেজন্যই আমরা হিমবাহ আর সমুদ্র দেখে মজা পাই,
বৈশ্বিক পরিধির বাইরে থেকে একে পর্যবেক্ষণ করতে উপভোগ করি।
আমরা অলৌকিক কিছুর নাগাল পেতে ভালোবাসি,
এবং আমাদের জন্য সেটা চরম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আমার মনে হয় আমি আসলে সাফল্য আর ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলে আসছিলাম।
আর সাফল্যের একটা খুবই মজার ব্যাপার হল
যে আমরা মনে করি যে এর অর্থ আমরা সবাই জানি।
যদি আমি আপনাদেরকে বলি যে এই পর্দাটার পিছনে কেউ একজন আছেন
যিনি একজন অত্যন্ত সফল ব্যক্তি, সাথেসাথেই আপনাদের মাথায় নির্দিষ্ট কিছু চিন্তা চলে আসবে।
আপনারা হয়ত ভাববেন ঐ লোক টির নিশ্চয়ই অনেক টাকা,
অথবা কোন না কোন ক্ষেত্রে তিনি যশ খ্যাতি অর্জন করেছেন।
সাফল্য নিয়ে আমার ব্যক্তিগত তত্ত্ব হল - ওহ! আমি নিজে কিন্তু একজন
ব্যক্তি যার কিনা সাফল্যে ব্যাপক কৌতুহল। আমি আসলেই সফল হতে চাই।
আমি সবসময়ই ভাবি, "আর কিভাবে আমি আরও বেশি সফল হতে পারি?"
কিন্তু যতই বয়স হচ্ছে,
সাফল্য শব্দটার অর্থ সম্পর্কেও আমার মতপ্রভেদ তৈরি হচ্ছে।
সাফল্য সম্পর্কে আমার যা উপলব্ধি সেটা বলা যাক।
আপনার পক্ষে সবকিছুতে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
আমরা কর্মজীবন আর ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য নিয়ে অনেক কথা শুনে থাকি।
বাজে কথা। আপনার পক্ষে সব পাওয়া সম্ভব নয়। আপনি পারবেন না।
তাই সাফল্যের যে কোন দর্শনকেই
মানতে হবে যে এটা আসলে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,
আর সেই ক্ষতির উৎস কোথায়?
আমি মনে করি, যে কোন বিচক্ষণ জীবনই স্বীকার করবে,
যেরকমটা বললাম, এমন কিছু একটা থাকবেই যেটাতে আমরা সফল হতে পারছি না|
একটা সফল জীবন সম্পর্কেই ভাবা যাক না,
অধিকাংশ সময়ই, সফলভাবে জীবনযাপন বলতে
আমরা যে ধারণা পোষণ করি, তা আমাদের নিজেদের ধারণা নয়।
অন্য কোন মানুষের কাছ থেকে আনা।
বিশেষত, পুরুষ হলে, তার বাবার
আর মহিলা হলে, তার মায়ের কাছ থেকে আনা।
মনঃসমীক্ষণ বিজ্ঞান প্রায় ৮০ বছর ধরে এই বার্তা আমাদের কানে বাজিয়ে আসছে।
কেউই যথেষ্ঠ মনযোগ দিয়ে তা শুনছে না, কিন্তু আমার প্রগাঢ় বিশ্বাস যে আসলে তা সত্যি।
আর আমরা যাবতীয় মেসেজ গলাধঃকরণ করি
সবকিছু থেকে, টেলিভিশন, বিজ্ঞাপন
প্রচার, ইত্যাদি!
এগুলো প্রচণ্ড রকম প্রভাববিস্তারকারী মাধ্যম
যেগুলো আমাদের চাওয়া আর ব্যক্তিগত দর্শনকে সংজ্ঞায়িত করে।
যখন আমাদের বলা হল যে ব্যঙ্কিং খুবই সম্মানজনক একটা পেশা
আমাদের অনেকেই ব্যঙ্কিং এ ঢুকল।
আর যখন ব্যাঙ্কিং আর তত বেশি সম্মানজনক নয়, আমরা ব্যাঙ্কিং এ আমাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।
আমরা পরামর্শ নেয়ার ব্যাপারে বড়ই উদার।
তাই আমি যুক্তি দেখাচ্ছি যে আমাদের
নিজেদের সাফল্যের ধারণাকে পরিত্যাগই নয়,
সেগুলো আদৌ আমাদের কিনা তাও আমাদের নিরূপণ করা উচিৎ।
আমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনায় আমাদের মনোনিবেশ করা উচিৎ।
সেগুলো যে আমাদের তা এবং
আমাদের উচ্চাভিলাষগুলোর সত্যিকার স্রষ্টাও আমরা কিনা তা নিশ্চিত হওয়া উচিত।
কারণ আপনি যা চান তা না পেতে পারাটা একটা যথেষ্ট বাজে ব্যাপার,
কিন্তু এরকম ধারণা থাকা তার থেকেও খারাপ যে
আপনি যা চেয়েছিলেন এবং আপনার যাত্রা সমাপ্তিতে যা পেলেন
প্রকৃতপক্ষে, আপনি তা মোটেও চান নি।
তাই আমি এখানেই শেষ করতে চাই।
যাই হোক, আমি আসলেই জোর দিতে
চাই সফলতার অর্থের উপর।
কিন্তু আমাদের কারও কারও ধারণাগুলো যে অদ্ভূত তা আমরা যেন স্বীকার করি।
আমাদের সাফল্যের ধারণাকে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে।
চলুন নিশ্চিত করি যে আমাদের সাফল্যের ধারণাগুলো সত্যিকারভাবেই আমাদের নিজেদের।
অনেক ধন্যবাদ।
(করতালি)
ক্রিস এন্ডারসনঃ অসাধারণ! আপনি কিভাবে সামঞ্জস্য রাখেন
এই ধারণাটির ব্যাপারে -- যে
কাউকে এরকম 'লুজার' ভাবার ধারণাটা খারাপ,
সাথেসাথে আপনার জীবনের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণকে অনেক লোক মিলে ছিনিয়ে নিচ্ছে সেটাও।
এবং এমন একটা সমাজে, যেখানে সেটা অনুপ্রাণিত হয়,
সম্ভবতঃ কাউকে জয় আর কাউকে পরাজয় বরণ করতেই হয়।
এলেইন ডে বোটনঃ হ্যাঁ | আমার মনে হয় আমি খুব সামান্যই
জয় আর পরাজয়ের অনিশ্চিত এই প্রক্রিয়ার উপর আলোপাত করতে চেয়েছি।
কারণ আজকাল আমরা
সবকিছুর ন্যায্যতার উপর খুবই জোর দেই।
এবং রাজনীতিবিদরা সবসময়ই ন্যায়বিচার নিয়ে কথা বলেন।
আমি কিন্তু ন্যায়বিচারে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখি, আমি শুধু এটাই ভাবি যে এটা অসম্ভব।
তাই আমাদের সামর্থ অনুসারে সবকিছুই করা উচিৎ,
আমাদের সেই অন্বেষণের জন্যও যাবতীয় সামর্থ দিয়ে কাজ করা উচিৎ।
কিন্তু দিন শেষে আমাদের এটা মনে রাখা উচিৎ
যে কারোরই মুখোমুখি আমরা হই না কেন, তাদের জীবনের ঘটনাগুলো যেরকমই হোক না কেন,
সবকিছু এলোমেলো করে দেয়ার মত দুর্দান্ত কিছু থাকবেই।
আর এটা বোঝার অবকাশ তৈরি করতেই আমি চেষ্টা করছি।
তা না হলে আমরা ওই ন্যায্য এর চিন্তায় অবরূদ্ধ হয়ে পড়তে পারি।
ক্রিস এন্ডারসনঃ তার মানে কি আপনি বিশ্বাস করেন
একটি সফল অর্থনীতির সাথে আপনার এই উদার, নম্র কর্মদর্শণকে
সম্পৃক্ত করা সম্ভব?
অথবা আপনার কি তা অসম্ভব বলে মনে হয় ?
আমরা যে এর উপর এত বেশি জোর দিচ্ছি সেটারই কি আসলে কোন মানে নেই?
এলেইন ডি বোটনঃ এরকম চিন্তা খুবই আতঙ্কদায়ক যে
ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি কাজ আদায় করে নেয়া যায়,
এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা যত বেশি নির্দয় হবে,
মানুষের মনোভাব তত বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে।
নিজের আদর্শ বাবা হিসেবে কাকে আপনার পছন্দ বলে আপনারা ভাবতে চান?
আপনার আদর্শ বাবা এমন কেউই যে কিনা বলিষ্ঠ কিন্তু আবার কোমল।
আর এই সীমাটি নির্ধারণ করা খুবই কঠিন।
আমাদের এমন বাবাদের প্রয়োজন, যারা সমাজের দৃষ্টান্তস্থাপনকারী প্রবর্তক ধাচের মানুষ
দুই চরমসীমাকে এড়িয়ে,
যার একপ্রান্তে কর্তৃত্বপরায়ণ স্বৈরাচারী কঠোর শাসক, আর অন্য প্রান্তে,
লম্পট, নীতিবিবেকহীন কেউ।
ক্রিস এন্ডারসন: এলেইন ডে বোটন
এলেইন ডে বোটনঃ অনেক ধন্যবাদ
(করতালি)