(বাদ্যসঙ্গীত) শুভ সন্ধ্যা । আপনারা সবাই জানেন, আমরা কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি আপনাদের কাছে এসেছি একটা ছোট প্রস্তাব নিয়ে যা আমাদের অর্থনৈতিক ভার লাঘব করতে পারে । এই চিন্তাটা আমার মাথায় এসেছে যখন আমি কথা বলছিলাম এম.আই.টি. র একজন পদার্থবিদ বন্ধুর সাথে । সে খুব কষ্ট করে আমাকে একটা জিনিস বোঝানোর চেষ্টা করছিল ঃ একটা সুন্দর এক্সপেরিমেন্ট এর ব্যাপারে যাতে লেজার ব্যবহার করে পদার্থকে শীতল করা হয়। সে আমাকে প্রথম থেকেই হতবুদ্ধি করে রেখেছিল, কারণ আলো কোন কিছুকে শীতল করতে পারে না । আলো বস্তুকে উত্তপ্ত করে। এটা ঠিক এই মুহূর্তেও ঘটছে । আমাকে এই মুহূর্তে আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছেন কারণ এই ঘরটি ১০০ কুইন্টাইলন এরও বেশি ফোটন দিয়ে ভরা, এবং সেগুলো এই জায়গার মধ্যে এলোমেলোভাবে প্রায় আলোর বেগে গতিশীল আছে । সবগুলোই ভিন্ন ভিন্ন রং এর , এগুলো ভিন্ন ভিন্ন কম্পাঙ্কে তরঙ্গায়িত হচ্ছে , এবং সেগুলো প্রত্যেক দেয়ালে প্রতিহত হয়ে ফিরে আসছে , এমনকি আমার গায়েও ধাক্কা খাচ্ছে , এবং সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু সোজাসুজি আপনার চোখের ভিতর উড়ে উড়ে আসছে। আর সে কারণেই আপনার মস্তিষ্কে আমার দাঁড়িয়ে থাকার চিত্র তৈরি হচ্ছে। এখন লেজার হচ্ছে একটা আলাদা জিনিস । এটা ফোটন ব্যবহার করে, কিন্তু সেগুলো সবগুলোই সিনক্রোনাইজড থাকে । আর আপনি যদি সেগুলোকে একটা রশ্মির মধ্যে ফোকাস করতে পারেন আপনি একটা অসাধারণ জিনিস পাবেন । লেজার দিয়ে আপনি এত সূক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন যে আপনি চোখের ভিতরে সার্জারী করতে পারবেন , আপনি এটাকে ব্যবহার করতে পারেন বৃহৎ পরিমাণের ডাটা জমিয়ে রাখতে , এবং আপনি একে ব্যবহার করতে পারেন চমৎকার পরীক্ষা দিয়ে , যা বোঝাতে আমার বন্ধুর বেগ পেতে হচ্ছিল । প্রথমে আপনি একটা বোতলে পরমাণুকে আবদ্ধ করে রাখেন । এটা তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে পরমাণুকে আলাদা করে রাখে পরিবেশের নয়েজ থেকে এবং পরমাণুগুলো নিজেরা বেশ জবরদস্ত রকমে উদ্দাম, কিন্তু আপনি যিদি লেজার নিক্ষেপ করেন যেটা সূক্ষভাবে সঠিক কম্পাঙ্কে টিউন করা আছে, একটা পরমাণু সেই ফোটনগুলোকে শোষণ করে নিবে । এবং গতি হ্রাস করতে শুরু করবে। ধীরে ধীরে এটা শীতল হতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত এটা পরম শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছায় । এখন যদি আপনি সঠিক পরমাণুগুলো ব্যবহার করেন এবং সেগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণ শীতল করতে পারেন, উদ্ভট কিছু তখন ঘটবে । এটা আর কঠিন অবস্থায় থাকবে না, এটা তরল অথবা গ্যাসীয় অবস্থায় চলে যাবে। এটা পদার্থের এক নতুন অবস্থায় উত্তীর্ণ হবে যাকে আমরা বলি সুপারফ্লুইড । পরমাণুগুলো তাদের নিজস্ব পরিচয় হারিয়ে ফেলে, এবং কোয়ান্টাম পৃথিবীর নিয়ম তখন বলবৎ হয় , এবং একারণেই সুপারফ্লুইড তার এসব অদ্ভূত বৈশিষ্ট্যগুলো পায়। উদাহারণস্বরূপ, আপনি যদি সুপারফ্লুইড এর ভিতর দিয়ে আলো চালনা করেন , এটা ফোটনের গতি হ্রাস করে ফেলতে পারে, এর বেগ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিয়ে আসা সম্ভব । আরেকটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হল যে এটা প্রবাহিত হতে পারে কোনরকম সান্দ্রতা কিংবা ঘর্ষণ ছাড়াই । তাই আপনি যদি বোতলের মুখ খুলে ফেলেন , তাহলে এটা আর ভিতরে অবস্থান করে না । একটা পাতলা ফিল্ম ভিতরের দেয়াল বেয়ে উঠে আসে , উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাইরে নিঃসৃত হয় । অবশ্যই , যে মুহূর্তে এটা বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে আসে, এবং এর তাপমাত্রা এমনকি এক ডিগ্রির ভগ্নাংশের কাছাকাছি বেড়ে যায়, এটা সাথেসাথে সাধারণ পদার্থের রূপে ফিরে আসে। সুপারফ্লুইড হল আমাদের আবিষ্কৃত জিনিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক । আর এটাই আসলে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব আনন্দ ঃ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা আমাদের সংস্কার থেকে মুক্ত হই । কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষাতেই গল্প শেষ না, কারণ আপনাকে অন্য মানুষের মাঝে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি পারমাণবিক জীববিজ্ঞানে পি.এইচ.ডি করেছি । অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা কি নিয়ে কথা বলে তার খুব কমই আমি বুঝতে পারি । আমার বন্ধু আমাকে যখন ঐ এক্সপেরিমেন্টটা বোঝানোর চেষ্টা করছিল, আমার মনে হচ্ছিল সে যতই বলছে, ততই আমার বুঝে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ আপনি যখন কাউকে সামগ্রিক ধারণা দিতে চেষ্টা করেন একটা জটিল বিষয় সম্পর্কে, এর সারমর্ম উপলব্ধি করার জন্য, যত কম শব্দ ব্যবহার করবেন, ততোই ভালো। সত্যি বলতে, একদম কোন শব্দ ব্যবহার না করাই হয়ত আদর্শ হতে পারে । আমি ভেবে দেখেছি, আমার বন্ধু আমাকে বোঝাতে পারত পুরো এক্সপেরিমেন্টটাই নেচে নেচে । অবশ্যই, প্রায়শই মনে হয় আপনার যখন আসল প্রয়োজন , তখন আপনার চারপাশে কোন নৃত্যশিল্পীকেই আপনি খুঁজে পাবেন না। এখন, এটা কিন্ত পাগলের প্রলাপ না , যতখানি এটা শোনাচ্ছে । আমি চার বছর আগে একটা প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছিলাম যার নাম দিয়েছিলাম "আপনার পি এইচ ডি" কে নাচান । শব্দ দিয়ে তাদের গবেষণাকে ব্যাখ্যা না করে বরং বিজ্ঞানীদের তা ব্যাখ্যা করতে হবে নাচ ব্যবহার করে । এবং বিস্ময়করভাবে, এটা আসলে কাজ করেছে। নাচ আসলেই বিজ্ঞান বোঝার কাজকে সহজ করে দিতে পারে। আমার কথাকে পাত্তা দেয়ার দরকার নেই । ইন্টারনেটে যান এবং সার্চ করুন "Dance Your Ph.D." আপনি শত শত বিজ্ঞানীকে খুঁজে পাবেন যারা আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে । সবচেয়ে বিস্ময়কর যে জিনিসটি আমি এই প্রতিযোগীতার আয়োজন করতে গিয়ে শিখেছি তা হল কিছু বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় সরাসরি নৃত্যশিল্পীদের ব্যবহার করছেন। উদাহারণস্বরূপ, মিনেসোটা ইউনিভার্সিটিতে ড্যাভিড ওড্ডি নামক একজন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনীয়ার আছেন, যিনি কোষের চলন সম্পর্কে গবেষণা করতে নৃত্যশিল্পীদের সাথে কাজ করছেন । নৃত্যশিল্পীরা এটা করছে তাদের নৃত্যাকৃতি পরিবর্তন করে করে । যখন এক দিকের রাসায়নিক সিগনাল শেষ হয়ে আসে, এটা কোষকে এর অন্য দিকের আকৃতি বাড়ানোর জন্য উদ্দীপ্ত করে । কারণ কোষ ক্রমাগত পরিবেশের সংস্পর্শ আসছে আর টানছে । আর সেটা কোষকে সঠিক দিকে প্রবাহিত হতে সমর্থ করছে। কিন্তু যেটা বাইরে থেকে ধীরস্থির আর কমনীয় দেখায় ভিতরে তাকালে সেটা কিন্তু ভীষণ বিশৃঙ্খল । কারণ কোষগুলো তাদের আকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে অনমনীয় আমিষ তন্তুর কাঠামো দিয়ে, আর সেই ফাইবারগুলো ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে । কিন্তু যত দ্রুত সেগুলো বিস্ফোরিত হয়, এর শেষপ্রান্তে ততই আমিষ যুক্ত হয় এবং দীর্ঘতর হতে থাকে, তাই এটা ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে একদম একইরকম থাকার জন্য । ড্যাভিড এর গাণিতিক মডেল তৈরি করছে এবং সে এটা তার গবেষণাকক্ষে পরীক্ষা করছে , কিন্তু সেটা করার আগে, সে নৃত্যশিল্পীদের সাথে কাজ করছে সেটা নিয়ে কি ধরণের মডেল তৈরি করা যেতে পারে তা বুঝে ওঠার জন্য । এটা আসলে বেশ কার্যকর ব্রেইনস্টর্মিং , আর যখন আমি ড্যাভিড এর গবেষণা সম্পর্কে জানার জন্য তার ওখানে গেলাম, সে আমাকে বোঝানোর জন্য নৃত্যশিল্পীদের ব্যবহার করল প্রচলিত পদ্ধতির পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার না করে । আর এখানেই আমি আমার বিনীত অনুরোধ করব । আমার মনে হয় পাওয়ারপয়েন্টে তৈরি বাজে উপস্থাপনা আমাদের বিশ্ব অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ । (অট্টহাস্য)(হাততালি) এটা অবশ্য নির্ভর করে আপনি কিভাবে এর মাপযোখ করছেন, অবশ্যই, কিন্তু একটা হিসাবে দিনপ্রতি ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অপচয়ের উল্লেখ রয়েছে । সেখানে ধরে নেয়া হয়েছে আমাদের প্রেজেন্টেশনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে আধা ঘন্টা গড়ে চার জন দর্শকের জন্য ৩৫,০০০ ডলারের মত স্যালারীসহ, এবং এটা বেশ রক্ষণশীলভাবেই ধরে নিয়েছে যে যাবতীয় প্রেজেন্টেশনের এক চতুর্থাংশ সম্পূর্ণরূপে সময়ের অপচয়স্বরূপ এবং পরিষ্কার ভাবে আমরা জানি প্রত্যেকদিন ৩০ মিলিয়ন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি হয়, যেটা যোগ করলে বছরে অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন ডলার । অবশ্যই এটা শুধু আমাদের বসে থেকে পাওয়ারপয়েন্ট দেখে অপব্যয়িত সময়। অন্য খরচও আছে, কারণ পাওয়ারপয়েন্ট হচ্ছে একটা টুল, আর অন্য সব টুলের মতৈ, এটার অপপ্রয়োগ হতে পারে এবং হবে । আমার দেশের সিআইএ এর একটা কন্সেপ্ট যদি ব্যবহার করি তাহলে বলা যায় এটা দর্শকদের অনুভূতিশীল করে তুলতে সাহায্য করে । এটা তাদের সুন্দর ছবি, আর অপ্রয়োজনীয় তথ্য দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে । এটা প্রতিযোগীতার এক অবাস্তব বিভ্রম তৈরি করে, সাধারণত্বের বিভ্রম তৈরি করে, এবং সবচেয়ে সর্বনাশের ব্যাপার হল, এটা বোধগম্যতা সম্পর্কেও বিভ্রান্ত করে তোলে। আমার দেশে এখন ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা । আমাদের নেতারা অবিশ্রান্তভাবে টাকা বাঁচানোর ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং উপায় খুঁজছেন । আদর্শ হিসেবে নেয়া হয়েছে কলাবিভাগের সরকারী সহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়া। উদাহারণ হিসেবে দেখুন, কলাবিভাগের জাতীয় বৃত্তির পরিমাণ, ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট, এই প্রোগ্রামকে বাতিল করে দিলে সাথেসাথেই আমাদের জাতীয় ঋণ কমে আসবে শতকরা ১০০০ ভাগের এক ভাগ হারে । কেউ কোনভাবেই এই সংখ্যাগুলোর সাথে একমত হতে পারছে না। যাহোক, একবার আমরা যদি কলাবিভাগের সরকারী ফাণ্ড বন্ধ করে দেই, কিছু অসুবিধাও সৃষ্টি হবে। বেকারদের সারিতে শিল্পীদের স্থান উঁচু হবে। অনেকেই মাদকাসক্তি আর পতিতাবৃত্তিতে নেমে পড়বে , আর সেটা নিশ্চিতভাবেই শহুরাঞ্চলে সম্পত্তির দাম অনেক কমিয়ে দেবে। এসব কিছুই আমরা যা সঞ্চয় করে রাখতে চাচ্ছি, সেটাকে নির্মুল করে দেবে। আমি এখন তাই বিনীতভাবে আমার ধ্যানধারণা অনুযায়ী প্রস্তাব করব, যেটা আমার আশা, সূক্ষ আপত্তিরও সম্মুখীন হবে না । একবার আমরা যদি শিল্পীদের জন্য সরকারী সহায়তাকে বাদ দেই, চলুন তাদেরকে কাজে ফিরিয়ে আনি পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার থামিয়ে । আমি প্রস্তাব করছি পরীক্ষা হিসেবে, আমরা শুরু করতে পারি আমেরিকান নৃত্যশিল্পীদের দিয়ে। যাহোক, তারা কিন্তু শিল্পীদের মধ্যেও সবচেয়ে বিরল হয়ে পড়ছে !! প্রায় জখম অবস্থা আর খুব মন্থর গতির আরোগ্য লাভ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থার কারণে । তার চেয়ে বরং আমাদের পি এইচ ডি কে নৃত্যে উপস্থাপন করে, আমরা আমাদের জটিল সমস্যাগুলোকে নাচের মাধ্যমে বোঝাতে নৃত্যশিল্পীদের ব্যবহার করতে পারি। চিন্তা করে দেখুন আমাদের রাজনীতিবিদরা নাচ ব্যবহার করছেন এটা বোঝানোর জন্য যে কেন আমাদের বাইরের একটি দেশে আক্রমণ করা উচিত অথবা একটা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংককে জামিন দিয়ে মুক্তি দেয়া উচিত । এটা অবশ্যই সাহায্য করবে। অবশ্যই দূর কোন ভবিষ্যতে , কোনদিন, অনুপ্রেরণা দেয়াররও প্রযুক্তি আসবে পাওয়ারপয়েন্ট এর থেকেও শক্তিশালী কিছু আবিষ্কৃত হতে পারে, নৃত্যশিল্পীদের নৃত্য সম্পাদনাকে অলঙ্কৃত টুল হিসেবে চিন্তা করা হবে। যাহোক, আমি সেই দিনে বিশ্বাস করি , আমরা হয়ত এই বর্তমান আর্থিক দুর্ভোগ অতিক্রম করে যাব। হয়ত তখন আমাদের এই আয়েস করাটা সাধ্য কুলোবে - দর্শক হিসেবে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে বসে না থেকে মানুষকে(নৃত্যশিল্পীদের) বিভিন্ন ভঙ্গিতে,আকারে গতিশীল দেখতে পারব । (বাদ্যসঙ্গীত) (হাততালি)