আমার নাম ক্যামেরন রাসেল, এবং আমি গত বেশ কয়েকবছর ধরে মডেলিংয়ের কাজ করছি। সঠিকভাবে বলতে গেলে দশ বছর। এবং আমার মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে রুমের সবাই একটু অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে আছেন কারণ,আমার হয়তো এই জামাটা পরা ঠিক হয়নি। (হাসি) সৌভাগ্যক্রমে আমি বাড়তি জামা এনেছি বদলানোর জন্য। TED'র মঞ্চে এটাই প্রথম কোন জামা বদলানো, তাই,বলা যায় আপনারা সৌভাগ্যবান যে এর সাক্ষী হতে পারছেন। আমার আসাটা মহিলাদের কারো কাছে অপ্রীতিকর লাগলে, আমাকে এখন বলার দরকার নেই, পরে আমি ট্যুইটারে দেখতে পাব। (হাসি) আমি বলতে চাই যে, আমি প্রায় নিশ্চিত আমাকে নিয়ে আপনাদের ধারণা ১০ সেকেন্ডে বদলে দিতে পারব। সবাই এটা করতে পারে না। এই হিলগুলো তেমন আরামদায়ক না, ভালো হয় আমি যদি এগুলো না পরি। এই সোয়েটারটা মাথার উপর দিয়ে পরাটাই সবচেয়ে ঝামেলার কারণ তখন আপনারা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসবেন, তাই এটা মাথায় থাকার সময় কেউ কিছু করবেন না। এবার সব ঠিকাছে। তো,আমি এটা কেন করলাম? কারণ জামাটা অদ্ভুত ছিলো। (হাসি) আচ্ছা... (হাসি) তবে এই ছবিটির মত অতো অদ্ভুত ছিলনা আশা করি। ছবি হয়তো শক্তিশালী, কিন্তু একটা ছবি শুধুমাত্র বাহ্যিক দিকটাই প্রকাশ করে। আমাকে নিয়ে আপনাদের যে ধারণা ছিল, তা আমি ছয় সেকেন্ডে বদলে দিয়েছি। এবং এই ছবিটায় যেমন দেখতে পাচ্ছেন, বাস্তব জীবনে কোনদিন আমার কোনো প্রেমিক ছিলনা। আমার খুবই অস্বস্তি লাগছিলো, এবং ফটোগ্রাফার আমাকে বলছিলো পিঠটা বাঁকা করতে এবং ছেলেটার চুলে হাত রাখতে। আর অবশ্যই,সার্জারির দাগ বা দু'দিন আগে কাজের ফলে চামড়ার যে তামাটে ভাবটা হয়েছিল সেটা ঢেকে রাখতে, আসলে আমরা দেখতে যেমন তা বদলানোর জন্য নিজেরা তেমন কিছু করতে পারিনা, আর বাহ্যিক এবং অপরিবর্তনীয় হলেও আমরা কীরকম দেখতে তা আমাদের জীবনে বেশ বড় একটা প্রভাব ফেলে। তাই আজকে,আমার জন্য, সাহসী হওয়া মানে সৎ হওয়া। এবং,একজন মডেল হওয়ার কারণেই আমি এই মঞ্চে আসতে পেরেছি। আমি এই মঞ্চে আসতে পেরেছি কারণ আমি একজন সুন্দর,ফর্সা চামড়ার মেয়ে, এবং মডেলিংয়ে আমাদের মত মেয়েদের বলা হয় যৌন আবেদনময়ী। এখন আমি সেসব প্রশ্নের উত্তর দিব যেগুলো মানুষ আমাকে সবসময় জিজ্ঞেস করে, কিন্তু চমকপ্রদ সত্যের সাথে। তো,প্রথম প্রশ্নটা হচ্ছে আমি কীভাবে মডেলিংয়ে আসলাম? আমি সবসময় উত্তর দেই "ওহ! আমাকে ওমনভাবেই তৈরি করা হয়েছিল," কিন্তু এর মাধ্যমে আসল সত্যিটা প্রকাশ পায়না। আমি আসলে মডেল হতে পেরেছি কারণ আমি জীনগত লটারি জিতেছিলাম এবং আমি একটা ঐতিহ্যের সুবিধাভোগী, আপনারা হয়তো ভাবছেন ঐতিহ্যটা কী। আচ্ছা,গত কয়েকশতাব্দী ধরে আমরা সৌন্দর্যকে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ও তারুণ্য আর প্রতিসাম্যতা যা প্রকৃতিগতভাবেই আমরা লাভ করি সেগুলোর ভিত্তিতে ব্যাখ্যা না করে লম্বা,সরু দেহ এবং কমনীয়তা ও ফর্সা চামড়া দিয়েও ব্যাখ্যা করছি। এবং এই ঐতিহ্যের জন্যেই আমি সুবিধা পেয়েছি, এবং এই ঐতিহ্যের কারণেই আমি টাকা আয় করতে পারছি। আর আমি জানি দর্শকদের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছেন যাদের এই ব্যাপারে সংশয় আছে, এবং কোন কোন ফ্যাশন সচেতন হয়তো বলতে চাচ্ছেন, "দাঁড়ান।নাওমি,টায়রা,জোয়ান স্মলস,লু ওয়েন। এরা?" প্রথমেই আমি মডেলদের সম্পর্কে আপনাদের জানাশোনার প্রশংসা করছি,দারুণ! (হাসি) কিন্তু দুর্ভাগ্যবশঃত আপনাদের জানাতে চাচ্ছি যে ২০০৭ সালে, এনওয়াইইউ এর একজন অতি উৎসাহী পিএইচডি ছাত্র রানওয়ের সকল মডেলদের সংখ্যা গুণেছিলেন, ভাড়া করা প্রত্যেক মডেলকে, এবং সবমিলিয়ে ৬৭৭ জন মডেলের মধ্যে অশেতাঙ্গ ছিল মাত্র ২৭ জন, বা ৪ ভাগেরও কম। এরপরে যে প্রশ্নটা সবাই সবসময় জিজ্ঞেস করে তা হচ্ছে, "বড় হলে আমিও কি মডেল হতে পারব?" এর প্রথম উত্তরটা হচ্ছে,"আমি জানিনা, আমি এর দায়িত্বে নেই।" কিন্তু দ্বিতীয় উত্তরটা, যা আমি আসলে এই ছোট মেয়েদের বলতে চাই তা হচ্ছে "কেন? তুমি তো যেকোন কিছুই হতে পারো। তুমি হতে পারো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কিংবা পরবর্তী ইন্টারনেটের আবিষ্কারক অথবা একজন নিনজা হৃদচিকিৎসক কবি, এটা হতে পারলে দারুণ হবে,কারণ তুমিই প্রথম হবে এরকম কেউ।" (হাসি) কিন্তু এত দারুণসব জিনিস থাকার পরেও তারা যেন বলতে চায়, "না,না,ক্যামেরন,আমি মডেল হতে চাই," তখন আমি বলি, "তাহলে আমার বস হও।' কারণ আমি কোনকিছুর দায়িত্বে নেই। আবার তুমি অ্যামেরিকান ভোগের প্রধান সম্পাদকও হতে পারো কিংবা এইচএনএম এর সিইও অথবা পরবর্তী স্টিভেন মাইসেল। তুমি বড় হলে মডেল হতে চাও এটা বলার মানে হচ্ছে তুমি বড় হলে সেই লটারিটা জিততে চাও। কিন্তু এটা তোমার হাতে নেই এবং তাতে ভালোই হয়েছে, আর এটা কোন ক্যারিয়ার গড়ার রাস্তা নয়। এই দশ বছর মডেলিংয়ে থাকার পরে আমি যা শিখেছি তা আপনাদের দেখাব, কারণ হৃদচিকিৎসকদের মত অত না দেখে, ব্যপারটার মূলে আমরা এখনই যেতে পারি। তো,যদি ফটোগ্রাফার ওইখানে থাকে, সুন্দর একটা এইচএমআই'র মত আলোটা ওইখানে, আর মক্কেল যদি বলেন যে, "আমরা একটা হাঁটার দৃশ্য চাই," এই পা'টা আগে যাবে,সুন্দর আর বেশিক্ষণধরে, এই হাতটা পেছনে যাবে,এই হাতটা সামনে আসবে, মাথাটা থাকবে এক-চতুর্থাংশে, আর তুমি শুধু পেছন থেকে সামনে আসবে, খালি এটাই করো, এরপর তুমি পেছনে তোমার কাল্পনিক বন্ধুদের দিকে তাকাবে, ৩০০, ৪০০, ৫০০ বার। (হাসি) এটা হয়তো অনেকটা এরকম দেখাবে। (হাসি) আশা করি মাঝখানেরটার মত ওত অদ্ভুত দেখাবেনা। সেটা ছিল...আমি জানিনা সেখানে কী ঘটেছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, আপনি স্কুল শেষ করেছেন, আপনার একটি বায়োডাটা আছে, আপনি কয়েকটা চাকরি করেছেন, এরপর আপনি আর কিছুই বলতে পারবেন না। আপনি যদি বলেন আপনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চান কিন্তু আপনার বায়োডাটায় লেখা থাকে, "অন্তর্বাস মডেলিং:১০ বছর," মানুষ আপনাকে দেখে মুচকি হাসবে। এর পরের প্রশ্নটা হচ্ছে, "তারা কি সব ছবিই সম্পাদনা করে?" হ্যাঁ, তারা প্রায় সব ছবিই সম্পাদনা করে থাকেন, কিন্তু যা ঘটছে এটা তার একটা ছোট্ট অংশ মাত্র। এটা আমার তোলা প্রথম ছবি এবং সেবারই আমি প্রথমবার বিকিনি পরেছিলাম, আর তখনও আমার মাসিক শুরু হয়নি। হয়তো একটু ব্যক্তিগত বিষয়ে চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমি ছিলাম একজন তরুণী। এটা তার কয়েকমাস আগে তোলা, দাদীর সাথে আমাকে যেমন দেখাচ্ছিলো। সেম ডে'র প্রচ্ছদে আমি, এটা তোলার সময় আমার বন্ধু এসেছিল। এটা আমি একটা পার্টিতে, ফ্রেঞ্চ ভোগে ছবি দেয়ার কয়দিন আগে। এখানে আমি সকার দলে এবং ভি ম্যাগাজিনে। আর এটায় বর্তমানে আমি যেমন আছি। এবং আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে এই ছবিগুলো আসলে আমার ছবি না। এগুলোকে তৈরি করা হয়েছে। এবং এগুলো তৈরি করা হয়েছে একদল পেশাদারদের দিয়ে, যাদের মধ্যে ছিল হেয়ার স্টাইলিস্ট, মেকাপ আর্টিস্ট,ফটোগ্রাফার ও স্টাইলিস্টগণ আর তাদের সহকারীরা এবং প্রি-প্রোডাকশন ও পোস্ট-প্রোডাকশন, এবং তারা এটা বানিয়েছেন। আমি না। এরপর যে প্রশ্নটা লোকেরা আমাকে সবসময় জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি ফ্রি'তে কিছু পাও?" (হাসি) আমার অনেক অনেক ৮-ইঞ্চি হিল আছে যেগুলো আমি কখনো পরিনি, অবশ্য শুরুতে পরতাম, কিন্তু আমার ফ্রিতে পাওয়া জিনিসগুলো হচ্ছে বাস্তব জীবনে পাওয়া, আর এই বিষয়ে কথা বলতেও আমাদের ভালো লাগেনা। আমি ক্যামব্রিজে বেড়ে উঠেছি, এবং একবার আমি ভুলে টাকা ফেলে একটা দোকানে চলে গিয়েছিলাম আর তারা আমাকে জামাটা এমনিই দিয়ে দেয়। কিশোরী থাকতে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে গাড়ি চালিয়েছিলাম ও ছিলো বাজে ড্রাইভার, আর ও নিয়ম ভাঙ্গে এবং অতি অবশ্যই, আমাদের আটকানো হয়েছিল, কিন্তু "দুঃখিত,অফিসার" বলতেই তারা আবার আমাদের রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিল। আর আমি এগুলো ফ্রি পেয়েছিলাম আমি দেখতে কেমন সেজন্যে, এইজন্যে না যে আমি কে,এবং অনেক লোক আছেন যারা ঝামেলায় পড়েন তারা দেখতে কেমন এই জন্যে, তারা কারা এইজন্যে না। আমি নিউইয়র্কে থাকি,এবং গতবছর, ১৪০,০০০ টিনএজারকে আটক করে তল্লাশি করা হয়েছিল, এর মধ্যে ৮৬% ছিল কালো এবং ল্যাটিনো, আর তাদের বেশিরভাগই ছিলো তরুণ, আর নিউইয়র্কে মাত্র ১৭৭,০০০ জন কালো এবং ল্যাটিনো তরুণ থাকে, তাই,তাদের জন্য, "আমাকে কি আটকানো হবে?", এটা কোন প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে "আমাকে আর কতবার আটকানো হবে? কখন আমাকে আটকানো হবে?' আজকে কথা বলার জন্য গবেষণা করার সময় আমি জানতে পারি যে,যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ বছর বয়সী মেয়েদের ৫৩% তাদের শরীরকে পছন্দ করেনা, এবং ১৭ বছর হতেই সংখ্যাটা ৭৮% হয়ে যায়। তো,সর্বশেষ যে প্রশ্নটা মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, "মডেল হওয়ার অনুভূতি কেমন?" এবং আমার মনে হয় তারা যে উত্তরটা খোঁজে তা হলো, "তুমি যদি একটুখানি চিকন হও, আর তোমার যদি উজ্জ্বল চুল থাকে, তাহলে তুমি সুখী আর দুর্দান্ত থাকবে।" এবং যখন আমরা ব্যাকস্টেজে থাকি, আমরা অনেকটা এরকম উত্তরই দেই। আমরা বলি যে,"এরকম ঘোরাফেরা করা আর এরকম সৃষ্টিশীল,উদ্যমী,অনুরাগী মানুষদের সাথে কাজ করাটা আসলেই দারুণ।" এবং এসব সত্যি, কিন্তু এটা মুদ্রার মাত্র একটা পিঠ, কারণ যেসব কথাগুলো আমরা ক্যামেরার সামনে কখনোই বলিনা, এবং আমি কখনো ক্যামেরার সামনে বলিনি,তা হলো, "আমি নিরাপদবোধ করিনা।" আমি নিরাপদবোধ করিনা কারণ আমাকে প্রত্যহ ভাবতে হয় আমাকে কেমন দেখাচ্ছে। আর আপনারা যদি কখনো ভেবে থাকেন যে, "আমার যদি আরো সরু উরু আর উজ্জ্বল চুল থাকে,আমি কি আরো সুখী হব?" তাহলে আপনারা একদল মডেলদের সাথে কথা বলুন, কারণ তাদের সবচেয়ে সরু উরু,সবচেয়ে উজ্জ্বল চুল,আর সবচেয়ে দারুণ জামা আছে, কিন্তু তারাই খুব সম্ভবত এই গ্রহের সবচেয়ে অনিরাপদবোধকারী নারী। যখন আমি আজকে কি বলবো তা লিখছিলাম, আমি বুঝতে পারি যে সৎভাবে দু'দিক বজায় রাখা খুবই কঠিন, কারণ, একদিকে আমার বেশ অস্বস্তি হবে এখানে এসে এটা বলা যে, "দেখ,আমি এত সুবিধা পেয়েছি কারণ সবই আমার পক্ষে ছিল," তবে এর সাথে আমার এটা বলতেও খারাপ লাগবে যে, "এবং এটা আমাকে সবসময় সুখী করেনি।" তবে সবচেয়ে কঠিন ছিল লিঙ্গ এবং বর্ণবৈষম্যর একটা ঐতিহ্যকে সবার সামনে প্রকাশ করা যেখানে আমি নিজেই ওটার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। কিন্তু আমি খুশি এবং গর্বিত এখানে আসতে পেরে এবং আমি মনে করি এখানে আসতে পারাটা দারুণ ব্যাপার ১০ বা ২০ বা ৩০ বছর আর আমার ক্যারিয়ারে আরো কিছু এজেন্সি যোগ হওয়ার আগেই, কারণ তখন হয়তো আমি বলতাম না কীভাবে আমি আমার প্রথম কাজ পেলাম, কিংবা আমি কীভাবে কলেজের বেতন দিয়েছিলাম সেটাও হয়তো বলতাম না, যেটাকে এখন মনে হচ্ছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমার কথার যদি কোন সারবস্তু থাকে, আশা করি সেটা হচ্ছে, আমরা মেনে নিতে পারব যে, আমাদের পাওয়া সাফল্য কিংবা ব্যর্থতায়, ছবির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ধন্যবাদ (হাততালি)