আসুন এক মহাজাগতিক ভ্রমণে বেরই।
কোটি বছরব্যাপ্ত সময়ের ভাঁজ খোলা হবে এখানে
মাত্র ১০ মিনিটে- মহাগর্জন থেকে আজ-অব্দি।
দু’কোটি বিশ লক্ষ বছর পেরুবো
মাত্র ১ সেকেন্ডে।
এ স্কেলে, মানব প্রজাতিকে শেষ সেকেন্ডের
ভগ্নাংশের আগে পাওয়াই যাবে না।
মহাবিশ্ব শুরু হবে আর ৫…
আর মাত্র ৪…
৩…
২…
১…
শুরুর ঝলসানো মুহূর্তগুলি,
দ্যূতিময় শক্তিতে স্থানের নিজস্ব বিস্ফোরণ।
নবজাত মহাবিশ্ব শুরু করে তার প্রসারণ,
ও শীতলীকরণ।
শ’কোটি বছরে, মহাকর্ষবল ধীরে বস্তুকণাকে
পুঞ্জীভূত করে গড়ে দানবীয় ঢেউ,
নিসর্গের স্থাপত্য।
গ্যাস-ধুলোর মেঘ ঘন হয় যেন বিরাট
পানির ফোঁটা নিসর্গের সুতোয়
এবং তৈরী হয় ছায়াপথ।
প্রতিবেশী ছায়াপথসমূহ পারস্পরিক মহাকর্ষ
বলে আটকে পরে,
একীভূত হয় চাঞ্চল্যকর সঙ্ঘর্ষে।
প্রকৃত সময়ের হিসেবে এটি শতকোটি বছরব্যাপী
হতে পারে,
অসংখ্য নতুন ছায়পথ থেকে গ্যাস ও তারকার
দীর্ঘ-গাঁথা তৈরী করে মহাকর্ষ বল।
বিবর্তনের ফলে মহাবিশ্ব পেরোয় বহু
স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যুগ,
বিস্তীর্ণকালের শুরু ও সমাপ্তি
চিহ্নিত করা হয় অনন্য ধারাবাহিক কিছু ধাপেঃ
বিস্ময়সমূহের জন্ম ও মৃত্যু’র।
মহা বিবর্তনের ধারাবাহিক উৎকর্ষতার
ফলাফল আমরা।
নিসর্গের বিবর্তন।
যে সম্পর্কে আমরা কদাচিৎ অবগত।
আমরা সম্মুখীন হই আমাদের নিজস্ব
ছায়াপথের, আকাশ-গঙ্গার।
এরই মধ্যে, কত-শত তারকা তৈরী হত,
এবং তাদের কিছু মরেও যায়।
এখানে, একটি প্রকাণ্ড লাল-তারকা ধীরে-ধীরে
নিভে যাচ্ছে।
এ-র গ্যাস একটি কৃষ্ণগহ্বরের গভীরে
ঘূর্ণাবর্তিত হচ্ছে।
এ-দানবের অপরিমেয় মহাকর্ষীয় টান-এ তারকাসমূহ
চিরে আলাদা হয়ে যেতে পারে,
এরা বস্তুকণাকে তার পৃষ্ঠ থেকে ছিঁড়ে,
টেনে আনতে পারে নিজস্ব কক্ষপথ,
এই অতি-তপ্ত বস্তুকণারা কৃষ্ণগহ্বরের মুখ
ঘিরে পাক খেতে থাকে,
এবং এ-র অন্তঃস্তল থেকে তীব্র ফিনকি
দিয়ে বর্ষিত হয় বিকিরণ।
যদিও নিসর্গের কোথাও-কোথাও এ-রূপ ফিনকি
দেখা যায়,
কিন্তু অন্তঃস্তল এখনো এক রহস্য।
এমন-কি আলোও এ-থেকে রেহাই পায় না,
তাই এ-র অভ্যন্তর আমাদের কাছে
চিরকালই গুপ্ত।
তারকাসমূহ পারমাণবিক চুল্লী,
দীপ্তি দেয় যতক্ষণ জ্বালানি থাকে।
বৃহৎ তারকার বিনাশ বিস্ফোরণে।
বিদীর্ণ এ তারকা দেয় প্রাণ উপাদানঃ
নিশ্বাস নেবার অক্সিজেন
আমাদের পেশীর কার্বন,
আমাদের রক্তের লৌহ।
এরা নবতারকা, অত্যূতজ্জল তারকা-বিস্ফোরণের
নিভে যাওয়া উপাদানে এরা গঠিত।
নবতারকার জন্ম হচ্ছে,
মৃত তারকার ধ্বংসাবশেষ থেকে।
এ-ই এ-ব্রহ্মাণ্ডের
মৃত্যু ও পুনর্জন্মের ধারা যেভাবে
প্রসৃত হয়েছি আমরাও।
কেননা এটা ছিল এরকম এক নীহারিকা
৫’শ কোটি বছর আগে
যা থেকে আমাদের সূর্য জন্মেছে।
নৈসর্গিক গ্যাসের মেঘ সিঁচিত হয় ঐসব
উপাদানে যেগুলো এসেছে মহাকর্ষীয় মুঠো’র ফলে।
একটি তারকার জন্ম হয়,
সূর্য নামে যাকে ডাকা হবে।
একে ঘিরে, তৈরী হয় এক গ্রহ-নেটওয়ার্ক,
যাদের সাথে ছিল পৃথিবীও।
তাদের শৈশবে, আমাদের সূর্য এবং চাঁদে অবিরত
আঘাত ও বর্ষণ চালায় নৈসর্গিক ধুলো,
গ্রহাণু,
এবং ধূমকেতু।
উদ্দাম আঘাতে
এবং সূর্য থেকে শক্তিশালী
অতিবেগুনী বিকিরিণে
সদ্য-যুবা পৃথিবী ছিল এক
ভীষণ প্রতিকূল রাজ্য।
ভূ-পৃষ্ঠ ছিল আগ্নেয়গিরির দখলে
প্রতিকূল এবং নিষ্প্রাণ।
কিন্তু সমুদ্রের তলদেশে,
প্রাণ জেগে উঠতে থাকে।
সর্বশেষ তত্ত্ব মতে, আগ্নেয়গিরির
মুখ-নিসৃত রাসায়নিক
ঘনীভূত হয় এবং সৃষ্টি করে সেই
পূর্বশর্তের যা দরকার
প্রথম কোষ তৈরী হওয়ার।
৩’শ কোটি বছরে ধরে
সরল, আণুবীক্ষণিক জৈবদেহই
এ-গ্রহে ছিল সব’চে অগ্রসর প্রাণ।
কিছু প্রাণ, যাদের নীলাভ-সবুজ
ব্যাকটেরিয়া বলা হয়
খুবই ধীরে অক্সিজেনের বুদ-বুদ
ছাড়তে শুরু করে
এবং বায়ুমণ্ডলকে বদলে দেয় প্রগাঢ়ভাবে।
কিছু অক্সিজেন তৈরী করে ওজোন-এর
এক পাতলা স্তর
যা সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিকে
রোধ করে।
পরিবর্তিত এ-পরিবেশে
নতুন জৈবদেহ উদিত হতে থাকে
পৃথিবীর পানিতে।
সবুজ শৈবালের বসতি-তে তৈরী হতে
থাকে প্রচুর অক্সিজেন।
টিল জীবের আত্মপ্রকাশের
অল্প কিছু আগে,
পৃথিবী তার ইতিহাসের বৃহৎ
বরফযুগের চলে যায়।
তখন জৈবদেহের বিবর্তন ঘটে অদ্ভুত
এবং অসংখ্য কাঠামোয়।
মহাবিশ্বের ঘটমান সময়
চলমান।