বিজ্ঞানের এক উদীয়মান শাখার সাথে
আপনাদেরকে পরিচয় করাতে চাচ্ছি,
যেটি এখনও অনেকটা কল্পনাশ্রয়ী
অথচ সাঙ্ঘাতিক রকমের রোমাঞ্চকর,
এবং যা নিঃসন্দেহে খুবই দ্রুতবর্ধমান।
কোয়ান্টাম জীববিদ্যা
খুব সরল একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজেঃ
কোয়ান্টাম মেকানিক্স,
সেই অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর এবং ওজস্বী তত্ত্ব
যা অণু-পরমাণুর সেই সূক্ষ্ম জগতে প্রযোজ্য
যা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নশাস্ত্রকে
এতভাবে খতিয়ে দেখছে,
সে কি জীবকোষের গভীরেও সদা ক্রিয়াশীল?
অন্য ভাষায়ঃ এমন কোন প্রক্রিয়া,
পদ্ধতি, ঘটনা আছে কি
যেগুলো জৈব অঙ্গে ঘটমান এবং
যেগুলোর ব্যাখ্যা কেবলমাত্র
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাহায্যে করা যেতে পারে?
এখন, কোয়ান্টাম বায়োলজি কোন নতুন বিদ্যা নয়;
সেই ১৯৩০ এর প্রথমভাগ থেকেই এটি চলে আসছে।
কিন্তু এটা মাত্র এক দশকের মত হবে,
যখন সযত্ন গবেষণা --
যা বর্ণালিবীক্ষণ ব্যবহার করে
বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে করা হয় --
সেখানে কিছু সুনির্দিষ্ট কাজকারবারের
পরিষ্কার, পাকাপোক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে
যেগুলো ব্যখ্যা করতে কোয়ান্টাম
মেকানিক্স এর দরকার হয়
কোয়ান্টাম বায়োলজিতে একীভূত হয়
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ, প্রাণরসায়নবিদ,
আর অণু-জীববিদেরা --
একান্তই বহুমাত্রিক এক জ্ঞানের ক্ষেত্র এটি
আমি এসেছি কোয়ান্টাম ফিজিক্স থেকে,
অর্থাৎ আমি একজন অণু পদার্থবিদ।
আমি তিন দশকেরও বেশি কাটিয়েছি
কোয়ান্টাম মেকানিক্স কে আত্মস্থ করার প্রচেষ্টায়
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা,
নীলস বোর,
বলেছিলেন, তুমি যদি এতে বিস্ময়াবিষ্ট না হও,
তাহলে তুমি এটি বোঝোনি।
তাই আমি খুশিই বোধ করি কেননা
আমি এখনও এতে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে আছি
এটি একটি ভালো লক্ষণ।
অর্থাৎ বিশ্বের একেবারে সূক্ষ্মতম কাঠামো
নিয়ে আমি জ্ঞানচর্চা করি --
যেগুলো কিনা বস্তুজগতের মূল উপাদান।
যদি আয়তনের পর্যায়ক্রমে চিন্তা করি,
কোন একটি নিত্যদিনের বস্তু নিয়ে শুরু করি,
যেমন টেনিস বল,
এবং ক্রমান্বয়ে ছোট আকারের দিকে যেতে থাকি --
সূচের ছিদ্র থেকে জীবকোষ,
তারপরে ব্যাকটেরিয়া, তারপরে এনজাইম --
অবশেষে পৌঁছে যাবেন সূক্ষ্ম বস্তুদের জগতে।
এখন, আপনারা হয়তো
ন্যানোটেকনোলজি নামটা শুনে থাকবেন।
এক ন্যানোমিটার হল এক মিটারের
বিলিয়ন ভাগের একভাগ।
আমার চর্চার ক্ষেত্র হচ্ছে নিউক্লিয়াস,
পরমাণুর গভীরে অতি ক্ষুদ্র একটি বিন্দু।
তুলনার বিচারে এটি আরও ক্ষুদ্র।
এটাই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এলাকা,
এবং পদার্থবিদেরা ও রসায়নবিদেরা
লম্বা সময় পেয়েছেন
এটিকে জানার ও খতিয়ে দেখার।
অপরদিকে, আমার মতে, জীববিদগণ
বেশ হাল্কা ভাবেই শুরু করেছিলেন।
তাঁদের অণুর বল-কাঠি মডেল নিয়েই
তাঁরা বেশ তৃপ্ত।
(হাসির রোল)
বলগুলি হচ্ছে পরমাণু, আর
কাঠিগুলি হচ্ছে তাদের মধ্যেকার বন্ধন
আর পরীক্ষাগারে তাঁরা যখন এটি বানাতে পারেন না,
আজকাল, তাঁদের খুবই শক্তিশালী কম্পিউটার আছে
যেগুলো এসব সুবিশাল অণুর প্রতিরূপ বানিয়ে দেবে।
এটি লাখ খানেক পরমাণু দিয়ে তৈরি একটি প্রোটিন।
এটিকে ব্যাখ্যা করতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের
খুব বেশি গভীরে যাবার কোনো দরকার নেই।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবির্ভাব
হয়েছিল ১৯২০ এর দশকে।
এটি কতগুলো চমৎকার ও জবরদস্ত গানিতিক নিয়ম ও ধারণা
যা দিয়ে অতি সূক্ষ্ম বস্তুদের জগতকে ব্যাখ্যা করা যায়।
এবং এটি আমাদের নিত্যদিনের জগতের চেয়ে
সম্পূর্ণ আলাদা এক জগত,
অযুত-নিযুত পরমাণু দিয়ে তৈরি।
জগতটি সম্ভাবনা আর দৈবযোগের
উপরে ভিত্তি করে তৈরি।
এটি একটি ধোঁয়াশাময় জগত।
এটি একটি ভুতুড়ে জগত,
যেখানে বস্তুকণারা ছড়িয়ে যাওয়া
তরঙ্গের মত আচরণও করতে পারে।
আমরা যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স
বা কোয়ান্টাম ফিজিক্স কে ধরে নেই,
বস্তুজগতের মুল ভিত্তি হিসাবে,
তাহলে এটি বলাতে অবাক হবার কিছু নেই যে,
কোয়ান্টাম ফিজিক্সের উপরেই
জৈব রসায়ন দাঁড়িয়ে আছে।
মোটের উপর, এটি সেই বিধান দেয়
যা ব্যাখ্যা করে,
কিভাবে পরমাণুগুলো জোট বেঁধে
জৈব অণু তৈরি করে।
জৈব রসায়নের জটিলতার পরিধি বাড়ালেই
আমরা পাই অণু-জীববিদ্যা,
যা নিশ্চিতভাবেই প্রাণে গিয়ে দাঁড়ায়।
এটি এরকমই, এতে অবাক হবার কিছু নেই।
প্রায় অবধারিত একটা ব্যাপার।
আপনি বলেন, "হ্যাঁ, জীবিতাবস্থাকে ব্যখ্যা করতে হলে
শেষমেশ কোয়ান্টাম মেকানিক্সেরই দ্বারস্থ হতে হবে"
কিন্তু এটা অন্য সবকিছুর জন্যই প্রযোজ্য।
এবং নিযুত-কোটি পরমানুদিয়ে তৈরি
সব জড় বস্তুর জন্যও প্রযোজ্য।
মূলতঃ কোয়ান্টামের এক পর্যায়ে
আমাদেরকে এই অদ্ভুতুড়ে
ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখতেই হবে
কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে আমরা
এটিকে ভুলে যেতে পারি।
কারণ, নিযুত-কোটি
পরমাণু যখন একত্রিত হয়
তখন কোয়ান্টামের এই অদ্ভুত
ব্যাপারগুলো স্রেফ হাওয়া হয়ে যায়।
কোয়ান্টাম জীববিদ্যা এমনটি নয়।
কোয়ান্টাম জীববিদ্যা এতটা অবধারিত নয়।
অবশ্যই কোন কোন আণবিক পর্যায়ে জীবনের
ভিত্তিমূল কোয়ান্টাম মেকানিক্সেই প্রথিত।
কোয়ান্টাম জীববিদ্যার কাজ হল
খুঁজে দেখা সেসব অনবধারিত --
অনির্দিষ্ট ধারনাগুলো,
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্তর্ভুক্ত
এবং দেখা যে, এগুলোর নিশ্চিতভাবে
কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে কি না
প্রাণ এর কর্মপন্থা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে।
এটি আমার যথাযথ উদাহরণ, সেই অননুমেয়তার
যা কোয়ান্টাম জগতে বিরাজমান।
ইনি একজন কোয়ান্টাম স্কীচালক।
দেখা যাচ্ছে তিনি অখণ্ডই আছেন,
তিনি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবান,
তারপরেও মনে হচ্ছে তিনি একই
সময়ে গাছটির দুইপাশ দিয়ে চলে এসেছেন।
বেশ, এরকম পথচিহ্ন যদি দেখে থাকেন
তাহলে নিশ্চয়ই ভাববেন যে
এটি নির্ঘাত কোন ভোজবাজি ছিল।
কিন্তু কোয়ান্টাম জগতে সবসময়েই
এমনটি ঘটে থাকে
বস্তুকণারা একই সময়ে
দুই জায়গায় অবস্থান করতে পারে।
তারা একই সময়ে একাধিক কাজ করতে পারে।
বস্তুকণারা বিস্তারনশীল তরঙ্গের
মত আচরণ করতে পারে।
এটি রীতিমত ঐন্দ্রজালিক মনে হয়।
প্রায় শতবর্ষ ধরে পদার্থবিদ এবং রসায়নবিদেরা
এই অদ্ভুতুড়ে ব্যাপারের সাথে
অভ্যস্ত হবার চেষ্টায় আছেন।
আমি জীববিজ্ঞানীদেরকে দোষ দেবোনা
যে তাঁদের কোয়ান্টাম মেকানিক্স
জানার কোন আগ্রহ ছিল না।
দেখুন, অদ্ভুতুড়ে হলেও এটি কিন্তু খুবই কেতাদুরস্ত;
এবং আমরা পদার্থবিদেরা পরীক্ষাগারে
এটি বজায় রাখতে খুবই সচেষ্ট।
আমরা গোটা ব্যবস্থাটির তাপমাত্রা
পরম শূন্যে নামিয়ে আনি,
আমরা বায়ুশূন্য স্থানে
পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাই,
বাইরের যে কোন প্রভাব থেকে
এটিকে আমরা মুক্ত রাখি।
জীবন্ত জীবকোষের ভেতরকার উষ্ণ, গোলমেলে,
জগাখিচুড়িময় অবস্থা থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
জীববিদ্যা নিজেই,
যদি অণু জীববিদ্যার কথা ধরেন,
খুব ভালো ভাবেই জীবনের
প্রক্রিয়া সমূহ বর্ণনা করতে পারে,
রসায়ন -- রাসায়নিক বিক্রিয়া হিসাবে।
আর এইসব সংক্ষেপক,
পরিনামদর্শী রাসায়নিক বিক্রিয়া,
দেখায় যে, আর পাঁচটা জিনিস
আর জীবন মূলতঃ একই উপাদানে তৈরি,
এবং আমরা যদি স্থূল জগতে
কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ভুলে থাকতে পারি,
তাহলে জীববিজ্ঞানের জগতেও
এটিকে ভুলে থাকতে পারবো।
বেশ, কিন্তু একজন এমনটি মানতে চাননি।
আরউইন শ্রডিংগার,
যিনি শ্রডিংগারের বেড়ালের জন্য বিখ্যাত,
একজন অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ।
১৯২০ এর দশকের
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের স্থপতিদের একজন।
১৯৪৪ সালে তিনি
"জীবন কি?" নামে একটি বই লেখেন
এটি সাঙ্ঘাতিক রকমের প্রভাব ফেলেছিল।
এটি ফ্রান্সিস ক্রিক এবং
জেমস ওয়াটসনকে প্রভাবিত করেছিল,
যারা ডিএনএ এর ডাবল-হেলিক্স
গঠন আবিষ্কার করেছিল।
এই বইয়ের একটি বর্ননা
ভাষান্তর করে তিনি বলেছিলেনঃ
আণবিক পর্যায়ে জীবন্ত
অবয়বগুলোতে সুনির্দিষ্ট বিন্যাস আছে,
খুবই ভিন্ন রকমের একটি সংগঠন যা
থার্মোডায়নামিক্স জনিত অণু পরমাণুর
বিশৃঙ্খল ধাক্কা-ধাক্কির চেয়ে ভিন্ন,
যেটি একই রকমের জটিল জড় বস্তুতে দেখা যায়।
বাস্তবমে জীবন্ত বস্তুরা এই শৃঙ্খলা মেনে চলে
বলেই ননে হয়, একটা সংগঠনে,
ঠিক পরম শূন্য তাপমাত্রায়
নামিয়ে আনা জড় বস্তুদের মত,
যেখানে কোয়ান্টামের প্রভাবসমুহ
অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখানে এই সংগঠনের -
এই শৃঙ্খলার মাঝে অসাধারণ কিছু আছে
জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে।
তাই শ্রডিংগার ধারনা করেছিলেন, জীবনের উপরে
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভূমিকা থাকতে পারে।
এটা খুবই কল্পনাপ্রসূত ও
সুদূরপ্রসারী একটি ধারনা,
এবং বাস্তবে এটি খুব বেশিদূর আগাতে পারেনি।
কিন্তু প্রথমেই যেমনটি বলেছিলাম,
গত দশক যাবত এক্ষেত্রে অনেক
পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ হয়েছে
যেগুলো দেখিয়েছে যে
জীববিজ্ঞানের কিছু কিছু সুনির্দিষ্ট প্রপঞ্চ
কোয়ান্টাম মেকানিক্স আশ্রিত
বলে মনে হয়।
এরকম কয়েকটি রোমাঞ্চকর ঘটনা
সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাতে চাই।
এটি কোয়ান্টাম জগতের
অন্যতম বহুল-বিদিত প্রপঞ্চ,
কোয়ান্টাম টানেলিং।
বামপাশের বক্সে দেখা যাচ্ছে
তরঙ্গসুলভ বিস্তারনশীল বিন্যাস
যা কোয়ান্টাম পদার্থ --
ইলেকট্রনের মত কণাসমূহে দেখা যায়,
যেটি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে
ফিরে আসা কোন ছোট বল নয়।
এটি একটি নির্দিষ্ট সম্ভাব্যতা বিশিষ্ট
একটি তরঙ্গ যা ভেদ করতে সক্ষম
কোন নিরেট দেয়াল, যেন একপাশ
থেকে অন্যপাশে চলে যাওয়া কোন ভূত।
ডানপাশের বক্সে একটি অনুজ্জ্বল
আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছেন।
কোয়ান্টাম টানেলিং অনুসারে একটা কণা
একটা অভেদ্য দেয়ালে ধাক্কা খেলেও
কোনভাবে, একেবারে ভোজবাজীর মত,
এক পাশ থেকে অদৃশ্য হয়ে
অন্য পাশে পুনরাবির্ভুত হয়।
এটার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা হল, আপনি যদি
একটা বলকে দেয়ালের উপর দিয়ে ছুঁড়তে চান,
তাহলে ওটাকে ওই দেয়াল পার হবার মত
পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করতে হবে।
কোয়ান্টাম জগতে আপনাকে এভাবে
দেয়ালের উপর দিয়ে ছুঁড়তে হবে না,
এটাকে দেয়ালে ছুঁড়লেও চলবে, এবং
নির্দিষ্ট একটি ধনাত্মক সম্ভাবনা থাকবে
যে, এটি একপাশে অদৃশ্য হয়ে
অন্যপাশে আবির্ভুত হবে।
এটি কিন্তু কোন কল্পকথা নয়।
আমরা এতে খুশি --
বেশ, "খুশি" শব্দটা এখানে যথার্থ নয়
(হাসির রোল)
আমরা এতে অভ্যস্ত।
(হাসির রোল)
প্রতিনিয়তই কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটে চলছে;
সত্যি বলতে, এর ফলেই সুর্য আলো দেয়।
কণাগুলো সেখানে পরস্পর একীভূত হয়,
আর সুর্য্য কোয়ান্টাম টানেলিং এর মাধ্যমে
হাইড্রোজেন কে হিলিয়ামে পরিণত করে।
৭০ এবং ৮০র দশকে ফিরে যাই, তখন
উদ্ঘাটিত হল যে কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটে থাকে
এমনকি জীব কোষের অভ্যন্তরেও।
এনজাইমগুলো, যারা জীবের মুল চালিকাশক্তি,
রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাবক --
এনজাইমগুলো জৈব অণু যারা জীব কোষের
ভিতরকার রাসায়নিক বিক্রিয়াতে গতি সঞ্চার করে
অনেক অনেক গুন বেশি গতি সঞ্চার করে।
এবং কিভাবে এটি ঘটে
তা বরাবরই রহস্যাবৃত ছিল।
বেশ, এটা উদ্ঘাটিত হল
যে, এনজাইমগুলো বিবর্তিত হয়েছে
একটি কৌশল রপ্ত করতে,
যা অতিপারমাণবিক কণাগুলোকে স্থানান্তর করে,
যেমন ইলেকট্রন এবং অবশ্যই প্রোটন,
কোয়ান্টাম টানেলিং এর মাধ্যমে
অণুর এক অংশ থেকে অন্য অংশে।
এটি কার্যকর, এটি ক্ষিপ্রগামী,
এটি অদৃশ্য করতে পারে --
একটি প্রোটন একজায়গা থেকে অদৃশ্য হয়ে
অন্য জায়গায় দৃশ্যমান হতে পারে।
এনজাইমের সাহায্যেই এমনটি ঘটে থাকে।
সেই ৮০র দশকে এটি নিয়ে গবেষণা হয়েছিল,
বিশেষ করে বার্কলের একটি গ্রুপ,
জুডিথ ক্লিনম্যান।
যুক্তরাজ্যস্থ অন্যান্য গ্রুপগুলিও
সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে
যে, এনজাইমগুলো আসলেই এমনটি করে থাকে।
আমার গ্রুপের করা গবেষণাতেও --
আমি যেমনটি বলেছি,
আমি একজন পরমাণু পদার্থবিদ,
কিন্তু আমি উপলদ্ধ্বি করেছি কোয়ান্টাম
মেকানিক্সকে ব্যবহার করতে পারি
পরমাণুর নিউক্লিয়াসে, এবং অন্যান্য
ক্ষেত্রেও এই হাতিয়ারকে ব্যবহার করতে পারি।
একটি প্রশ্ন আমরা করে থাকি
ডিএনএ মিউটেশন এর পেছনে
কোয়ান্টাম টানেলিং এর কোন ভূমিকা আছে কি না?
অধিকন্তু, এটি কোন নতুন ধারনা নয়;
এটি একেবারে ৬০ এর দশকের গোড়ায় নিয়ে যাবে।
ডিএনএর দুই তন্তু, সেই দুই প্যাঁচ বিশিষ্ট গঠন,
দাসা-কাঠি দিয়ে পরস্পর আটকানো;
যেন একটি মোচড়ানো মই।
এবং মইয়ের এই দাসা-কাঠিগুলো হল
হাইড্রোজেন বন্ধন --
এখানে প্রোটনগুলি দুই তন্তুর
মাঝখানে আঠা হিসেবে কাজ করে।
তাই, আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়
তারা ধরে রেখেছে এই বিশাল অণু গুলিকে --
নিউক্লিওটাইড গুলোকে -- একসাথে।
আরেকটু নিবিড়ভাবে দেখা যাক।
এটি আসলে কম্পিউটারে বানানো
একটি প্রতিরূপ।
মঝের ওই সাদা বল দুটো হল প্রোটন,
এবং দেখতেই পাচ্ছেন,
এটি একটি দ্বি-হাইড্রোজেন বন্ধন।
একটি একদিকে বসে আছে; আর অন্যটি উল্টোদিকে
খাড়া নেমে যাওয়া তন্তু দুটির সাপেক্ষে,
যেগুলি এখানে দৃশ্যমান নয়।
এমনও হতে পারে যে প্রোটন
দুটি লাফ দিয়ে জায়গা বদল করল।
সাদা বল দুটোকে লক্ষ্য করুন।
এরা একপাশ থেকে লাফিয়ে
অন্যপাশে চলে যেতে পারে।
এই সময়ে যদি প্রতিলিপি তৈরির প্রাথমিক ধাপ হিসেবে,
ডিএনএর তন্তু দুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়,
এবং প্রোটন দুটি বেঠিক অবস্থানে থেকে যায়,
তাহলে এটি একটি মিউটেশনে পর্যবসিত হতে পারে।
আধা শতাব্দী ধরে এটি আমাদের জানা।
প্রশ্ন হল, এরকমটি ঘটার সম্ভাবনা কেমন,
আর যদি ঘটেই তাহলে তা কিভাবে ঘটে?
তারা কি এই দেয়ালের উপর দিয়ে যাওয়া
বলদুটির মত লাফিয়ে জায়গা বদলায়?
না কি তারা কোয়ান্টাম টানেলিং করে,
এমন কি পর্যাপ্ত শক্তি না থাকা সত্ত্বেও?
প্রাথমিক নিদর্শনে এখানে কোয়ান্টাম টানেলিং
এর ভূমিকা থাকতে পারে বলেই মনে হয়।
আমরা এখনও জানিনা, এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ;
এটি এখনও একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
এটি কল্পনা নির্ভর,
কিন্তু এটি সেই
অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির একটি
যে, মিউটেশন প্রক্রিয়ায়
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভূমিকা আছে,
নিশ্চিতভাবেই এটির একটি বড় প্রভাব আছে,
নির্দিষ্ট ধরনের কিছু মিউটেশন বোঝার ক্ষেত্রে,
এমনকি সম্ভবত, ক্যান্সার কোষে
পর্যবসিত করা মিউটেশনগুলোর ক্ষেত্রেও।
জীববিজ্ঞানের অঙ্গনে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের
আরেকটি উদাহরণ হল কোয়ান্টাম কোহেরেন্স,
জীববিজ্ঞানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়ার মাঝে,
সালোক-সংশ্লেষণঃ বৃক্ষ এবং
ব্যাকটেরিয়া সূর্যালোক গ্রহণ করে,
এবং জৈববস্তু তৈরির কাজে
সেই সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে।
কোয়ান্টাম বস্তুর একই সময়ে একাধিক স্থানে
থাকার ব্যাপারটাকেই কোয়ান্টাম কোহেরেন্স বলে।
এটি সেই কোয়ান্টাম স্কি-চালক।
ওটি একটি বস্তু যা তরঙ্গের মত আচরণ করে,
যাতে করে এটি কেবল কোন একদিকে ভ্রমণ না করে,
বরং একই সময়ে একাধিক পথে ধাবিত হতে পারে।
কয়েক বছর আগে, তাবৎ বিজ্ঞানী সমাজ
রীতিমত স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল
যখন পরীক্ষালব্ধ প্রমাণসহ
একটা প্রকাশিত রচনায় দেখানো হল
যে, ব্যাকটেরিয়ার অভ্যন্তরে
কোয়ান্টাম কোহেরেন্স ঘটে থাকে,
যেগুলো সালোক সংশ্লেষণে সক্ষম।
ধারনা করা হয় ফোটন, যা কিনা
আলোর কণিকা, সুর্য্যালোক কণিকা,
আলোর এই দলাগুলিকে কোষস্থ
ক্লোরোফিল অণুগুলো আটকিয়ে ফেলে,
তারপরে সেগুলোকে বিক্রিয়া-কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়,
যেখানে সেগুলো রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়।
আর শুধুমাত্র একটা পথ অনুসরণ করে
তারা সেখানে যায় না;
তারা প্রত্যেকে একই সময়ে
একাধিক পথ অনুসরণ করে,
যাতে করে বিক্রিয়া-কেন্দ্রে যাবার পথগুলোর
মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর গুলোকে খুঁজে নিতে পারে
বিকিরিত তাপ রূপে
শক্তির কোন অপচয় না করেই।
জীবকোষের অভ্যন্তরে
কোয়ান্টাম কোহেরেন্স ঘটে চলেছে।
চমকপ্রদ একটি ধারণা,
এবং প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন নিবন্ধের
সাথে নিত্য নতুন প্রমাণও হাজির হচ্ছে,
নিশ্চিত করছে যে, এটি আসলেই ঘটছে।
এই অপরূপ, চমৎকার ধারনাটি হল
আমার তৃতীয় এবং শেষ উদাহরণ।
এটি এখনও অনেকটাই কল্পনাশ্রিত, কিন্তু আমাকে
এটা আপনাদের সামনে তুলতেই হবে।
এই ইউরোপিয়ান রবিনগুলি
স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে পরিভ্রমণ করে
একেবারে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত, প্রতি বছর শরতে,
আর অন্য অনেক জলজ প্রাণী
এবং এমনকি কীট-পতঙ্গের মত,
তারা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে
অনুভব করে করে পথ চিনে নেয়।
কিন্তু, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রটি
খুবই খুবই দুর্বল;
ফ্রিজে লাগানো চুম্বকটির চেয়েও
শতভাগ দুর্বল,
কিন্তু তারপরেও কিভাবে যেন জৈব বস্তুর
ভেতরকার রসায়নকে প্রভাবিত করতে সক্ষম।
সন্দেহের কোন অবকাশ নেই --
জার্মান এক পক্ষীবিশারদ জুটি,
ওলফগ্যাং ও রসউইথা উইল্টস্কো,
সেই ৭০ এর দশকে এটি নিশ্চিত করেছেন,
রবিনগুলি কোনভাবে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে
অনুভব করেই তাঁদের পথ খুঁজে নেয়,
দিকনির্দেশনা দেবার জন্য --
এ যেন দেহস্থিত এক কম্পাস।
কিভাবে এটি ঘটে? এটাই ছিল ধাঁধাঁ, রহস্য
বেশ, এখন এখানে একমাত্র তত্ত্বটি হল --
আমরা জানিনা তত্ত্বটি সঠিক কি না,
কিন্তু এটিই এক্ষেত্রে একমাত্র তত্ত্ব --
কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট নামক
এক প্রপঞ্চের মাধ্যমে এটি ঘটে থাকে।
রবিনগুলির চোখের রেটিনার ভিতরে --
আমি ফাজলামো করছি না -- রবিনের রেটিনার মাঝে
ক্রিপ্টোক্রোম নামে এক ধরনের প্রোটিন আছে,
যেটি আলোক-সংবেদী।
এই ক্রিপ্টোক্রোমের ভেতরে একজোড়া ইলেকট্রন
কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট অবস্থায় থাকে।
তো, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট হল সেই অবস্থা
যখন দুটি কণার মাঝে বিস্তর দূরত্ব
থাকা সত্ত্বেও কিভাবে যেন তারা
পরস্পর সংযুক্ত হয়ে থাকে।
এমনকি আইনস্টাইনও
এই ধারনাটাকে ঘৃণা করতেন;
তিনি এটাকে বলতেন
"দূরবর্তী ভুতুড়ে কাজকারবার"
(হাসির রোল)
তাই, স্বয়ং আইনস্টাইন এটাকে পছন্দ না করলে
বাকি সবাই তো অস্বস্তি বোধ করতেই পারি।
কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট অবস্থায়
একটি অণুর ভিতরে দুটি ইলেকট্রন
খুব সুচারু তালে নেচে চলে
যেটি খুবই সংবেদনশীলতা দেখায় পাখিটির উড়ন পথে,
পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাপেক্ষে।
আমরা জানিনা এটিই যথাযথ ব্যাখ্যা কি না,
কিন্তু ওয়াও! এটি কি রোমাঞ্চকর হবে না যদি
কোয়ান্টাম মেকানিক্স পাখিদেরকে পথ চেনায়?
কোয়ান্টাম জীববিদ্যা এখনও
বলতে গেলে আঁতুড় ঘরেই আছে।
এটি এখনও কল্পনানির্ভর।
কিন্তু আমার বিশ্বাস এটি
বিজ্ঞানের দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
আমি এও মনে করি যে আগামী দশকে বা কাছেপিঠে,
আমরা উদ্ঘাটন করতে শুরু করব যে,
এটি আসলে প্রাণ ছেয়ে আছে --
যে প্রাণ বিবর্তিত হয়ে কোয়ান্টাম জগতকে
সদ্ব্যবহার করার কৌশল রপ্ত করে চলছে।
দেখতে থাকুন, অচিরেই আরও চমক আসছে!
ধন্যবাদ।
(করতালি)